Wednesday, May 22

সৌদিতে বৈধতার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আশংকায় শ্রমিকরা

ঢাকা : ৩ দাবি নিয়ে হাজার হাজার শ্রমিক ভিড় করছেন সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস (জেদ্দা) ও জেনারেল কনস্যুলার (রিয়াদ) অফিসে। অবৈধ শ্রমিকদের বৈধতা দেয়ার লক্ষ্যে সৌদি সরকারের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করার পর থেকে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

সৌদি আরবে বসবাসরত শ্রমিকদের অভিযোগ, বাংলাদেশ দুতাবাস ও জেনারেল কনস্যুলার অফিসের ঢিলেমি ও দীর্ঘসূত্রিতায় বৈধতার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, দেশটির সরকারের ঘোষণা করা আগামী ৩ জুলাইয়ের মধ্যে বৈধতার সকল কাগজপত্র হাতে না পেলে নানা জটিলতায় পড়বে অসংখ্য শ্রমিকের ভাগ্য। এরইমধ্যে অনেক শ্রমিক কাজকর্ম ছেড়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে হতাশ হয়ে ফিরছেন দুতাবাস ও কনস্যুলার অফিস থেকে।

অন্যদিকে সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ দুতাবাস কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে শ্রমিকদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় জনবল নিয়োগ করে প্রাথমিক কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। এরইমধ্যে জনবল চেয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে। জনবল পেলে সৃষ্ট সংকট দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে।

সৌদি আরবে অবস্থানরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সৌদি সরকারের বৈধতার সুযোগ নিতে হলে প্রত্যোক কর্মীকে নতুন পাসপোর্ট, ট্রাভেল পারমিট কিংবা নবায়নকৃত পাসর্পোটের যে কোনো একটি থাকতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ কর্মীরই তা নেই। এজন্য এসব কাগজ ও পাসপোর্ট নিতে ভিড় করছে শ্রমিকরা। কিন্তু দুতাবাস ও কনস্যুলার অফিস সেসব কাগজপত্র সরবরাহ করতে বিলম্ব করছে। অনেক কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃতভাবেও কাগজপত্র আটকে রাখছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে টেলিফোন করা হলে বাংলাদেশ দুতাবাসের রাষ্ট্রদূত মোহাম্ম্দ শহীদুল ইসলাম বলেন, কর্মীদের ভীড় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে দূতাবাস ও কনস্যুলার অফিসের কর্মকর্তারা। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩ হাজার মানুষকে তাদের চাহিদামতো সেবা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করা হচেছ। আগামী ৩ জুলাই পর্যন্ত সৌদি সরকারের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা বলবৎ থাকবে। এ সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশের সব অবৈধ কর্মীদের হাতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু তীব্র জনবল সংকটের কারণে কর্মীদের চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না।

শ্রমিকদের অভিযোগ স্বীকার করে রাষ্ট্রদূত জানান, এরইমধ্যে জনবল চেয়ে ঢাকায় পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যান মন্ত্রণালয় এবং পাসপোর্ট বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে চিঠি দেয়া হয়েছে। জনবল আসলেই দ্রুত কর্মীদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। প্রাথমিকভাবে সংকট নিরসনে স্থানীয় লোকবল নিয়োগ করে কর্মীদের কাগজপত্র সরবরাহ করা হচেছ। কর্মীদের চাপ সামলাতে সকাল ৬ টা থেকে রাত ২ টা পর্যন্ত অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এমনকি ছুটির দিনও অফিস খোলা রেখে শ্রমিকদের সেবা ও পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে।

সৌদি রাষ্ট্রদুতের চিঠির প্রেক্ষিতে সরকারের করণীয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে জরুরিভিত্তিতে ১৮ জন কর্মকর্তাকে সৌদি পাঠানো হচ্ছে। প্রশিক্ষিত এসব জনবল কর্মীদের চাহিদা পূরণে বিশেষ সহায়তা করবে। তবে, স্বরাষ্ট্র, প্রবাসী ও পাসপোর্ট অফিসের কোনো উদ্দ্যোগ নেয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অনেক বাংলাদেশী এখনো জানেন না সৌদি সরকারের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার খবর। এজন্য স্থানীয় প্রত্রিকাসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করতে বলা দুতাবাস ও কনস্যুলার অফিসকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বলা হয়েছে, সময়সাপেক্ষ্য মেশিন রেডিবল পাসপোর্টের বিপরীতে হাতে লেখা পার্সপোর্ট দ্রুত সরবরাহ করতে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দাবি, সৌদি সরকারের সাধারণ ক্ষমার সুযোগ পেলে অবৈধ সব কর্মীরা বৈধ হবেন। তারা আকামা (ওয়ার্ক পারমিট) পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন। এতে কোনো কর্মীকে আর একজন চাকুরিদাতা কর্তার অধীনে জিম্মি থাকতে হবেনা।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার বলা হয় সৌদি আরবকে। এদেশে বাংলাদেশের অন্তত ১৫ লাখ কর্মী কর্মরত আছেন। সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রী দিপু মনি সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনার সাধারণ ক্ষমার ঘোষণার সুবিধা গ্রহণ করেন। ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশের অসংখ্য শ্রমিক অবৈধ হিসেবে কর্মরত আছেন সৌদি আরবে।  (ডিনিউজ)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়