Sunday, May 19

কার লাগিয়া গাঁথোরে সখি বকুল ফুলের মালা.....

মহম্মদপুর (মাগুরা) : ‘কার লাগিয়া গাঁথোরে সখি বকুল ফুলের মালা, নিশি রাতে কুঞ্জ বনে আসবে কি শ্যাম কালা, কৃষ্ণ তোমার রাখাল বেশে বাজায় বাশের বাঁশি, সুরে সুরে বলে শুধু-তোমায় ভালোবসি, সে যে ইচ্ছে করে রাতু দুপুরে- বাড়ায় বুকের জ্বালা; তুমি কার লাগিয়া গাঁথোরে সখি বকুল ফুলের মালা’। ফোক শিল্পী মনির খানের গাওয়া ওই গানে বকুল ফুলের মালার গুরুত্ব ও তাৎপর্য প্রকাশ পেয়েছে। ফুটে উঠেছে পল্লী প্রকৃতির শ্বাস্বত রূপ। তুলে ধরা হয়েছে গ্রামের প্রেমিক-প্রেমিকার অপ্রকাশিত বাক্যগুচ্ছ। বকুল ফুলের মালা নিয়ে এরকম অনেক অনেক গান ও কবিতা রয়েছে।

মূলত: বর্ষার ফুল বকুল। কিন্তু প্রকৃতির কারণে জ্যৈষ্ঠ্যের শুরুতেই বকুল গাছে ফুল ফুটেছে। বকুল ফুল অত্যন্ত সবর্ণ ও সুবাসিত। মধ্যরাতে বকুল শাখায় ফুল ফোটে। এরপর ভূমিতে ঝরতে থাকে। বকুল ফুলের মালার বেশ কদর রয়েছে। শখের বশে ও প্রিয়জনকে দেয়ার জন্যে-চোখে পড়লেই বকুল ফুলের মালা ক্রয় করেন অনেকে।

শনিবার সকাল। সময় তখন সাড়ে ১০টা। মাগুরার মহম্মদপুর সদর বাজার। বাজারের বীর প্রতিক গোলাম ইয়াকুব মিয়া মার্কেটের সামনে দিয়ে ৪টা ছেলে হেটে যাচ্ছে। ওরা বলছে-মালা নিবেন। বকুল ফুলের মালা। কাছে এগোতেই দেখলাম- তাদের প্রত্যেকের হাতেই বকুল ফুলের মালা। সুজন নামের এক তরুন যুবক ওদেরকে ডেকে- কাছে নিলো। নেড়েচেড়ে মালা দেখলো। ৪টি মালা কিনে নেয় ওই যুবক। বেশ বড়সড় মালা হলেও দামটা খুব কম। প্রতিটা মালার দাম মাত্র ৫ টাকা।

এরপর সবার সাথে কথা বলি। অমীত পড়ে ক্লাস ফোরে। তার ছোট ভাই সম্রাট দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। ওই সহোদর উপজেলা সদরের ধুপুড়িয়া গ্রামের অমরেশ মালো ছেলে। সহপাঠী আরেক মালা বিক্রেতা সাগরও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবার নাম নিচিন্ত মালো। দুর্জয় মালোর ছেলেও পড়ে টু’তে। এদের সবারই বাড়ি ধুপুড়িয়া গ্রামে। প্রত্যেকের পিতা পেশায় জেলে। স্থানীয় মুরাইল পশ্চিমখন্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তারা লেখা পড়া করে।

কাক ডাকা ভোরে অন্য কারো ঘুম না ভাঙলেও ওদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ছোখ মুছতে মুছতে ঝটপট বিছানা ছেড়ে ছুটে যায় বকুল তলায়। একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে তারা বকুল তলে ফুল কোড়ায়। ফুল সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় তারা মেতে ওঠে। পূর্ব দিগন্তে লাল সূর্য উঁকি দেয়। ফুল কোড়ানোর পালাও শেষ। এরপর ঘরে ফিরে যায় তারা। সুই-সুতো নিয়ে মালা গাঁথতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। মালা গাঁথা শেষ। এক একেক জন ২৫/৩০টি মালা তৈরি করেছে।

মালা গাঁথার পর্ব শেষ। এখন তড়িঘড়ি কিছু মুখে দেয়ার পালা। এরপর তারা যতেœ গাঁথা বকুল মালা বিক্রির জন্যে বাজার পানে ছোটে। গোটা বাজার ঘুরছে। সবাই বলছে-মালা নিবেন, বকুল ফুলের মালা। শখে ও প্রিয়জনকে দেয়ার জন্যে অনেকেই শিশুদের তৈরি ওই মালা কিনছেন। একেকটি মালার দাম মাত্র ৫ টাকা। একশ’ দেড়শ’ টাকা যেটায় বিক্রি হোক না কেন- তাতেই তারা বেজায় খুশি। মালা বিক্রি শেষে তারা ফের ঘরে ফিরে যায়। এবার স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি। পার্শ্ববর্তী মধুমতি নদীতে খানিকটা দুরন্তপনা শেষে তৈরি হয়ে স্কুলে যায়। শনিবার সকালে স্কুল পড়–য়া ও বকুল ফুলের মালা বিক্রেতা অমীত, সাগর, দুর্জয় ও সম্রাট বর্ণনা করছিলো ফুল কোড়ানো, মালা গাঁথা, বিক্রি ও স্কুলে যাওয়ার নানান বিষয়ে।

ফুলের মালা বিক্রেতা এসব স্কুলগামী শিশুরা জানায়, তারা মালা বিক্রির টাকা তাদের মায়েদের কাছে গচ্ছিত রাখে। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে তারা ওই অর্থ দিয়ে জামা-কাপড় কেনে। সহপাঠীদের নিয়ে মিষ্টি-মিঠাই কিনে ভাগাভাগি করে একসাথে খায়। দুরন্ত এসব শিশুরা ্সবের মধ্যেই খুঁজে পায় নির্মল আনন্দ।(ডিনিউজ)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়