Sunday, May 19

কালীগঞ্জে ইট ভাটার তাপে পুড়ে গেছে জমির ধান-গাছপালা

কালীগঞ্জ (লালমরিহাট): ইট ভাটার নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, বিষাক্ত গ্যাস ও  প্রচন্ড তাপদাহে ১০৩ বিঘার জমির কাঁচা ধান ও ভাটা সংলগ্ন ২৪টি বসত বাড়ির অসংখ্য গাছপালা পুড়ে যাওয়ায় প্রায় ৪২ জন কৃষক স্বর্বসান্ত হয়ে পড়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দ্রাহবী (বুকশুল্লা) গ্রামে । এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষতি গ্রস্থ কৃষক ও স্থায়ীয় প্রভাবশালী ভাটার মালিক পক্ষে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকগণ ক্ষতি পূরণ দাবী করে ইট ভাটার স্বত্তাধিকারী, ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মেসার্স এম.জে.এ ব্রিংকস নামের ইটভাটা সংলগ্ন প্রায় ১২১ বিঘা জমিতে চলতি মৌসুমে উন্নত জাতের ব্রি-২৯ ধান আবাদ করা হয়েছিল। কৃষকের কষ্টার্জিত সর্বস্ব মুলধন বিনিয়োগে আবাদি জমির ধানগুলো পাকতে শুরু করেছিল। অন্যদিকে গ্রাহকের ব্যাপক ইটের চাহিদায় ১ম দফায়  ভাটায় ইট পোড়ানো শেষ হলেও ২য় দফায় দ্রুত গতিতে নিম্ন মানের ইট পোড়ানোর জন্য ভাটায় পুনরায় আগুন জ্বালানো হয়। এতে অতিরিক্ত কয়লা, কাঠ ও গাছের গুড়ি জ্বালানো হয়। যার ফলশ্র“তিতে ইট ভাটার অভ্যন্তরে উচ্চ মাত্রা তাপদাহ, কালো ধোয়া ও বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয়।  এতে ইট ভাটা থেকে প্রচন্ড তাপদাহ ও অতিরিক্ত কালোধোয়া বের হতে থাকলে এলাকাবাসী ভাটা বন্ধের জন্য প্রতিবাদ জানান এবং মালিক পক্ষ তড়িঘড়ি করেই ইট ভাটার আগুন নিভিয়ে দেয়। কিন্তু ভাটার প্রচন্ড তাপদাহ ও অতিরিক্ত কালোধোয়া ও বিষাক্ত গ্যাস যেসব আবাদি জমি ও বসত বাড়ীর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, ওই সব জমির ধান ও বসত বাড়ীর অসংখ্য মৌসুমী ফল আম, কাঠাল লিচুর গাছ সহ বাঁশঝাড় পুড়ে গেছে। সবমিলিয়ে ওই এলাকায় ইট ভাটার কারণে প্রায় ২০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক স্থানীয় মজিবর রহমানের ছেলে কহিনুর ইসলাম বলেন, অনেক কষ্ট করে ৯৬ শতাংশ জমিতে ব্রি-২৯ জাতের ধান আবাদ করেছি কিন্তু ইটভাটার কারণে নিজের শেষ পুজিটুকু হারাতে বসেছি। শ্রী জাগরনের ছেলে সনাতন রায় বলেন, ১ দোন (২৭ শতাংশ) জমি আবাদ করেছি, অন্যের নিকট চড়া সুদের টাকা নিয়ে আবাদ করি। কিন্তু শেষ মুহুর্তে বৌ-বাচ্চা নিয়ে বাচার মত আর কিছুই রইল না। মতিয়ার হোসেনের ছেলে মকবুল মিয়া বলেন, আমরা দরিদ্র কৃষক ইট ভাটার গ্যাসের কারণে জমির ধান পুড়ে গেছে, আমরা প্রায় নি:স্ব ।
মেসার্স এম.জে.এ ইট ভাটার স্বত্বাধিকারী চন্দ্রপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে বজ্রপাতের কারণে আবাদি জমির ধান গুলো পুড়ে যেতে পারে। দীর্ঘদিন যাবৎ পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রত্যয়ন অনুযায়ী ইট ভাটা চালিয়ে আসছি কখনও এধরনের ক্ষতি হয় নাই এবারেও ইট ভাটার কারণে কৃষকদের কোন ক্ষতি হয়নি। ক্ষতি হয়েছে প্রকৃতিগত কারণে।
উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষকদের অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ সামছুদ্দিন মিয়া বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক প্রেরিত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত চলছে। ইট ভাটার আগুন নিভানোর পর সৃষ্ট গ্যাসের কারণে কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে বলা যেতে পারে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ গোলাম রাব্বী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর উপজেলা কৃষি অফিসারকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। তদন্তের পরে আইনত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(ডিনিউজ)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়