হামিদ মীর
আজ আমাকে একটি কৃতজ্ঞতা আদায় করতেই হবে। আমি জানি, আমার এই কৃতজ্ঞতা অনেকের কাছে ভালো লাগবে না। তারা আমার ওপর বিভিন্ন অপবাদ আরোপ করবেন। তবে আমি কোনো সময়ই আমার ওপর আরোপিত অপবাদের পরোয়া করি না। আমার কাজ হলো, যে কেউ ভুল করলে তা ধরিয়ে দেয়া এবং ভালো কিছু করলে তা স্বীকার করা। আজ আমি পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানের কৃতজ্ঞতা আদায় করবো। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ৩০ এপ্রিল ২০১৩ তারিখ সন্ধ্যায় রাজনীতি সম্পর্কে কথা বলেছেন, তবে রাজনীতিতে না ঢুকে পাকিস্তানের রাজনীতিকে একটি নতুন গতিধারায় প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। মঙ্গলবার রাওয়ালপিন্ডির আর্মি হেড কোয়ার্টারে শহীদ দিবসে সেনাপ্রধান জেনারেল ইশতিয়াক পারভেজ কিয়ানির বক্তৃতার ব্যাপারে পরে আলোচনা করবো। ওই গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতায় সেনাপ্রধান শুধু সেনা কর্মকর্তাদেরই নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষের পর্যন্ত কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন।
আমি ইতিহাসের একজন সাধারণ ছাত্র। ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় আমি পাকিস্তানে একটি নতুন ইতিহাস রচিত হতে দেখেছি, যখন সেনা হেড কোয়ার্টারে আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির প্রতিষ্ঠাতা বশির আহমদ বালুরের নাম জাতীয় বীর হিসেবে উচ্চারিত হয়েছে। সেনা কর্মকর্তাদের সামনে বশির আহমদ বালুরের বীরত্বের কিছু চিত্র বড় স্ক্রিনে দেখানো হয়। পরে তার ছেলে হারুন বালুরকে ডায়াসে আহ্বান করা হয়। হারুন বালুর শহীদ দিবসের বক্তৃতায় বলেন, পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য তার পার্টি যেকোনো ত্যাগের ব্যাপারে পিছপা হবে না। এ কথা এমন এক যুবকের মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে যিনি আইএনপি’র টিকিটে প্রাদেশিক নির্বাচনে লড়ছেন। পিতার মতোই তিনি বীরত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন।
এই বক্তব্য এমন এক যুবকের যার বংশধর এবং যার পার্টিকে বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানে গাদ্দার হিসেবে জানত। ১৯৪৮ সালের ১২ আগস্ট এই পার্টির সমাবেশে খান আবদুল কাইয়ুম খানের নির্দেশে গুলি চালানো হয়। ওই হামলায় ছয় শতাধিক মানুষ মারা যান। ওই শহীদদের অপরাধ শুধু এটাই ছিল যে, তারা খান আবদুল গাফফার খানের গ্রেফতারের প্রতিবাদে আন্দোলন করছিল, যিনি পাকিস্তানের আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিন্তু খান আবদুল কাইয়ুম খান তার দেশপ্রেম স্বীকার করতেন না। এটা ওই পার্টি যারা ১৯৬৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেনারেল আইয়ুব খানের বিপরীতে ফাতেমা জিন্নাহকে সমর্থন দেয়। কিন্তু ওই পার্টিকে গাদ্দার হিসেবে অভিহিত করে আদালতের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়। পরে দলটি তার নাম পরিবর্তন করে।
জেনারেল জিয়াউল হকের আমলে এই দলের বেশির ভাগ নেতাকে জেলে পাঠানো হয়। পরে আমরা দেখলাম আইএনপি নামের এই পার্টিই পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের বিরোধিকারীদের বিরুদ্ধে শিশাঢালা প্রাচীরের মতো প্রতিরোধ গড়ে সামরিক বাহিনীকে সহযোগিতা করে। পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এই দলটির ভূমিকা অসাধারণ। ৩০ এপ্রিল অতীতের ওই ‘গাদ্দার’ পার্টির অবদানের কথা স্বীকার করে পাকিস্তানের ইতিহাসের গতিধারা বদলে দেয়া হয়েছে। এতে পাকিস্তানের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা আমি এজন্যও আদায় করছি, আর্মি হেড কোয়ার্টারে প্রথমে সাংবাদিকদের ত্যাগ ও উৎসর্গের কথা স্বীকার করা হয়। ১০ মে ২০১১ পেশোয়ারে শহীদ হওয়া সাংবাদিক নসরুল্লাহ আফ্রিদির ছেলে এহসানুল্লাহ এবং নিষ্পাপ দুই শিশুকে শহীদ দিবসের স্টেজে ডেকে নিয়ে তাদের বাবার বীরত্বের কথা স্বীকার করা হয়।
নাসরুল্লাহ আফ্রিদি খায়বার এজেন্সি এলাকার ‘বারাহ’ নামক স্থানে থাকতেন। তিনি পেশোয়ারের একটি উর্দু সংবাদপত্রে লস্করে ইসলাম নামক একটি সংগঠনের অনিয়মের খবর প্রকাশ করেন। পরে তার বাড়িতে বোমা হামলা হয়। ২০০৬ সালে তিনি ‘বারাহ’ থেকে পেশোয়ারের চলে যান। এটা ছিল ওই সময় যখন খায়বার এজেন্সি নিয়ন্ত্রণ করতো বিচ্ছিন্নতাবাদী কিছু সংগঠন। নাসরুল্লাহ আফ্রিদিকে অনেক ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু তিনি সত্য প্রকাশ থেকে পিছপা হননি। ২০০৭ সালে পেশোয়ারে তার বাড়িতে আবারো বোমা হামলা হয়। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। তবে স্থানীয় কিছু সাংবাদিক পেশাগত বিরোধিতার কারণে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা মঙ্গল বাগকে নাসরুল্লাহ আফ্রিদির বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন। কিছু সরকারি কর্মকর্তাও নির্ভীক এই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মঙ্গল বাগকে ক্ষেপিয়ে তোলেন।২০১০ সালের ১০ জুলাই নাসরুল্লাহ আফ্রিদির গাড়িতে একটি রিমোট কন্ট্রোল বোমা রেখে দেয়া হয়। রাতে তিনি অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন।
শহীদ দিবসে নাসরুল্লাহ আফ্রিদির বাকপ্রতিবন্ধী নিষ্পাপ শিশুটি যখন ইশারায় তার বাবা জান্নাতে আরামে আছে বলে জানাচ্ছিল তখন আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলাম না। আমার পাশে বসা সাংবাদিক বন্ধু শাকিল তারাবিও বার বার চোখ মুছছিলেন। তিনি ওই শাকিল তারাবি যিনি সত্য লেখার অপরাধে জেনারেল পারভেজ মুশাররফের শাসনামলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নানা হয়রানির শিকার হয়েছেন। তিনি আজ আর্মি হেড কোয়ার্টারে বসে এই বার্তা দিচ্ছেন, সাংবাদিকদের সংগ্রাম কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নয়, বরং ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে যারা আইন ভেঙে দেশের বদনাম করে। একজন সেনা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সবার শ্রদ্ধার পাত্র। সামরিক বাহিনী প্রথমেই সাংবাদিকদের ত্যাগের কথা স্বীকার করেন। এজন্য আমরা সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞ।
ওই অনুষ্ঠানে পেশোয়ার পুলিশের বাহাদুর এসপি আবদুল কালাম, এফসি বেলুচিস্তানের সিপাহি নওয়াব খান এবং পাকিস্তান আর্মির নায়েক আখতার পারভেজের শহীদ হওয়ার কথাও আলোচিত হয়। সিপাহি নওয়াব খানের বৃদ্ধ বাবা ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যান। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পাকিস্তানের আর্মি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়, যা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
ওই অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে সেনাপ্রধান এ কথা স্পষ্ট করেন যে, পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন ১১ মে অনুষ্ঠিত হবেই। তিনি যথার্থই বলেছেন, গণতন্ত্র নস্যাৎ ও স্বৈরতন্ত্র কায়েমের স্বপ্ন সর্বসাধারণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বন্ধ হতে পারে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকদের কেউ কেউ তার বক্তব্য থেকে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার গন্ধ খোঁজার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে শহীদদের উত্তরসূরীরা আমাকে বলেছেন, যেমনিভাবে জেনারেল কিয়ানি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের সঙ্গে যুদ্ধকে নিজের যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করেছেন তেমনি দেশের আইন বার বার ভাঙার অভিযোগে পারভেজ মুশাররফকেও তিনি নিজের শত্রু মনে করেন। কারণ মুশাররফ পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে অপদস্থ করা ছাড়া কিছুই করেননি।
পাকিস্তানে দেশপ্রেমিক জনতার বেশির ভাগ মনে করেন, পাকিস্তানের তালেবান ও পারভেজ মুশাররফের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কারণ উভয়ই আইন ভঙ্গ করেছে। এজন্য মুশাররফকে আজীবন রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করে পেশোয়ার হাইকোর্টের দেয়া ঐতিহাসিক রায়ের প্রশংসা করেছেন বেশির ভাগ পাকিস্তানি। কারণ ৩১ জুলাই ২০০৯ তারিখের রায়ে মুশাররফকে স্পষ্টভাবে দেশদ্রোহী হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা পারভেজ মুশাররফের বিরোধীদের নিজেদের বিরোধী মনে করা বাদ দিয়েছে। এখন মুশাররফের চালু করা কিছু কিছু নীতি যা আজও চালু আছে তা থেকেও আমাদের আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসা উচিত। আমি বিশ্বাস করি, পাকিস্তানি তালেবানদের সবধরনের হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে সেনা-সাধারণ জনতা মিলে ১১ মে’র নির্বাচনী বৈতরণী সফলভাবে পার হবে। এরপর ইনশাআল্লাহ একটি নতুন পাকিস্তানের জন্ম হবে।
দৈনিক জং-এর সৌজন্যে। উর্দু থেকে অনুবাদ: জহির উদ্দিন বাবর
হামিদ মীর: পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক; প্রধান নির্বাহী, জিও টিভি(নতুন বার্তা)
আমি ইতিহাসের একজন সাধারণ ছাত্র। ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় আমি পাকিস্তানে একটি নতুন ইতিহাস রচিত হতে দেখেছি, যখন সেনা হেড কোয়ার্টারে আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির প্রতিষ্ঠাতা বশির আহমদ বালুরের নাম জাতীয় বীর হিসেবে উচ্চারিত হয়েছে। সেনা কর্মকর্তাদের সামনে বশির আহমদ বালুরের বীরত্বের কিছু চিত্র বড় স্ক্রিনে দেখানো হয়। পরে তার ছেলে হারুন বালুরকে ডায়াসে আহ্বান করা হয়। হারুন বালুর শহীদ দিবসের বক্তৃতায় বলেন, পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য তার পার্টি যেকোনো ত্যাগের ব্যাপারে পিছপা হবে না। এ কথা এমন এক যুবকের মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে যিনি আইএনপি’র টিকিটে প্রাদেশিক নির্বাচনে লড়ছেন। পিতার মতোই তিনি বীরত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন।
এই বক্তব্য এমন এক যুবকের যার বংশধর এবং যার পার্টিকে বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানে গাদ্দার হিসেবে জানত। ১৯৪৮ সালের ১২ আগস্ট এই পার্টির সমাবেশে খান আবদুল কাইয়ুম খানের নির্দেশে গুলি চালানো হয়। ওই হামলায় ছয় শতাধিক মানুষ মারা যান। ওই শহীদদের অপরাধ শুধু এটাই ছিল যে, তারা খান আবদুল গাফফার খানের গ্রেফতারের প্রতিবাদে আন্দোলন করছিল, যিনি পাকিস্তানের আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিন্তু খান আবদুল কাইয়ুম খান তার দেশপ্রেম স্বীকার করতেন না। এটা ওই পার্টি যারা ১৯৬৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেনারেল আইয়ুব খানের বিপরীতে ফাতেমা জিন্নাহকে সমর্থন দেয়। কিন্তু ওই পার্টিকে গাদ্দার হিসেবে অভিহিত করে আদালতের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়। পরে দলটি তার নাম পরিবর্তন করে।
জেনারেল জিয়াউল হকের আমলে এই দলের বেশির ভাগ নেতাকে জেলে পাঠানো হয়। পরে আমরা দেখলাম আইএনপি নামের এই পার্টিই পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের বিরোধিকারীদের বিরুদ্ধে শিশাঢালা প্রাচীরের মতো প্রতিরোধ গড়ে সামরিক বাহিনীকে সহযোগিতা করে। পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এই দলটির ভূমিকা অসাধারণ। ৩০ এপ্রিল অতীতের ওই ‘গাদ্দার’ পার্টির অবদানের কথা স্বীকার করে পাকিস্তানের ইতিহাসের গতিধারা বদলে দেয়া হয়েছে। এতে পাকিস্তানের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা আমি এজন্যও আদায় করছি, আর্মি হেড কোয়ার্টারে প্রথমে সাংবাদিকদের ত্যাগ ও উৎসর্গের কথা স্বীকার করা হয়। ১০ মে ২০১১ পেশোয়ারে শহীদ হওয়া সাংবাদিক নসরুল্লাহ আফ্রিদির ছেলে এহসানুল্লাহ এবং নিষ্পাপ দুই শিশুকে শহীদ দিবসের স্টেজে ডেকে নিয়ে তাদের বাবার বীরত্বের কথা স্বীকার করা হয়।
নাসরুল্লাহ আফ্রিদি খায়বার এজেন্সি এলাকার ‘বারাহ’ নামক স্থানে থাকতেন। তিনি পেশোয়ারের একটি উর্দু সংবাদপত্রে লস্করে ইসলাম নামক একটি সংগঠনের অনিয়মের খবর প্রকাশ করেন। পরে তার বাড়িতে বোমা হামলা হয়। ২০০৬ সালে তিনি ‘বারাহ’ থেকে পেশোয়ারের চলে যান। এটা ছিল ওই সময় যখন খায়বার এজেন্সি নিয়ন্ত্রণ করতো বিচ্ছিন্নতাবাদী কিছু সংগঠন। নাসরুল্লাহ আফ্রিদিকে অনেক ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু তিনি সত্য প্রকাশ থেকে পিছপা হননি। ২০০৭ সালে পেশোয়ারে তার বাড়িতে আবারো বোমা হামলা হয়। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। তবে স্থানীয় কিছু সাংবাদিক পেশাগত বিরোধিতার কারণে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা মঙ্গল বাগকে নাসরুল্লাহ আফ্রিদির বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন। কিছু সরকারি কর্মকর্তাও নির্ভীক এই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মঙ্গল বাগকে ক্ষেপিয়ে তোলেন।২০১০ সালের ১০ জুলাই নাসরুল্লাহ আফ্রিদির গাড়িতে একটি রিমোট কন্ট্রোল বোমা রেখে দেয়া হয়। রাতে তিনি অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন।
শহীদ দিবসে নাসরুল্লাহ আফ্রিদির বাকপ্রতিবন্ধী নিষ্পাপ শিশুটি যখন ইশারায় তার বাবা জান্নাতে আরামে আছে বলে জানাচ্ছিল তখন আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলাম না। আমার পাশে বসা সাংবাদিক বন্ধু শাকিল তারাবিও বার বার চোখ মুছছিলেন। তিনি ওই শাকিল তারাবি যিনি সত্য লেখার অপরাধে জেনারেল পারভেজ মুশাররফের শাসনামলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নানা হয়রানির শিকার হয়েছেন। তিনি আজ আর্মি হেড কোয়ার্টারে বসে এই বার্তা দিচ্ছেন, সাংবাদিকদের সংগ্রাম কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নয়, বরং ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে যারা আইন ভেঙে দেশের বদনাম করে। একজন সেনা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সবার শ্রদ্ধার পাত্র। সামরিক বাহিনী প্রথমেই সাংবাদিকদের ত্যাগের কথা স্বীকার করেন। এজন্য আমরা সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞ।
ওই অনুষ্ঠানে পেশোয়ার পুলিশের বাহাদুর এসপি আবদুল কালাম, এফসি বেলুচিস্তানের সিপাহি নওয়াব খান এবং পাকিস্তান আর্মির নায়েক আখতার পারভেজের শহীদ হওয়ার কথাও আলোচিত হয়। সিপাহি নওয়াব খানের বৃদ্ধ বাবা ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যান। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পাকিস্তানের আর্মি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়, যা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
ওই অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে সেনাপ্রধান এ কথা স্পষ্ট করেন যে, পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন ১১ মে অনুষ্ঠিত হবেই। তিনি যথার্থই বলেছেন, গণতন্ত্র নস্যাৎ ও স্বৈরতন্ত্র কায়েমের স্বপ্ন সর্বসাধারণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বন্ধ হতে পারে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকদের কেউ কেউ তার বক্তব্য থেকে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার গন্ধ খোঁজার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে শহীদদের উত্তরসূরীরা আমাকে বলেছেন, যেমনিভাবে জেনারেল কিয়ানি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের সঙ্গে যুদ্ধকে নিজের যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করেছেন তেমনি দেশের আইন বার বার ভাঙার অভিযোগে পারভেজ মুশাররফকেও তিনি নিজের শত্রু মনে করেন। কারণ মুশাররফ পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে অপদস্থ করা ছাড়া কিছুই করেননি।
পাকিস্তানে দেশপ্রেমিক জনতার বেশির ভাগ মনে করেন, পাকিস্তানের তালেবান ও পারভেজ মুশাররফের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কারণ উভয়ই আইন ভঙ্গ করেছে। এজন্য মুশাররফকে আজীবন রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করে পেশোয়ার হাইকোর্টের দেয়া ঐতিহাসিক রায়ের প্রশংসা করেছেন বেশির ভাগ পাকিস্তানি। কারণ ৩১ জুলাই ২০০৯ তারিখের রায়ে মুশাররফকে স্পষ্টভাবে দেশদ্রোহী হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা পারভেজ মুশাররফের বিরোধীদের নিজেদের বিরোধী মনে করা বাদ দিয়েছে। এখন মুশাররফের চালু করা কিছু কিছু নীতি যা আজও চালু আছে তা থেকেও আমাদের আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসা উচিত। আমি বিশ্বাস করি, পাকিস্তানি তালেবানদের সবধরনের হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে সেনা-সাধারণ জনতা মিলে ১১ মে’র নির্বাচনী বৈতরণী সফলভাবে পার হবে। এরপর ইনশাআল্লাহ একটি নতুন পাকিস্তানের জন্ম হবে।
দৈনিক জং-এর সৌজন্যে। উর্দু থেকে অনুবাদ: জহির উদ্দিন বাবর
হামিদ মীর: পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক; প্রধান নির্বাহী, জিও টিভি(নতুন বার্তা)
খবর বিভাগঃ
মতামত
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়