Thursday, May 23

এভারেস্টে যত রেকর্ড

এভারেস্ট এর রেকর্ড নিয়ে হিসাবের ইয়ত্তা নেই। এমনও আছে যে ৩০ বার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়েছেন অনেক অভিযাত্রী। আবার ১৩ বছর বয়সেও জয় করে ফেলেছে এভারেস্ট এমন ঘটনাও ঘটেছে। এমন কিছু রেকর্ড ...
এভারেস্টে প্রথম
এভারেস্টের চূড়ায় প্রথম উঠেন স্যার এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগে, ১৯৫৩ সালের ২৯ মে।
প্রথম নারী
১৯৭৫ সালের ১৬ মে প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্টের চূড়ায় পেঁৗছার কৃতিত্ব দেখান জাপানের জুনকো তাবেই,
অক্সিজেন ছাড়া
লিডিয়া ব্র্যাডি। তিনি এভারেস্ট জয় করেন ১৯৮৮ সালের ১৪ অক্টোবর।
১৯৭৮ সালের ৮ মে এভারেস্ট জয় করেন অস্ট্রিয়ার পিটার হেবেলার (ডানে ব) এবং ইতালির রেইনহোল্ড মেসনার(বায়ে)। এ অভিযানটি অনন্য, কারণ তাঁরাই প্রথম অক্সিজেন ছাড়া চূড়ায় আরোহণ করেন।
সহযোগিতা ছাড়া
ইতালির রেইনহোল্ড মেসনার প্রথম অভিযাত্রী যিনি একা এভারেস্ট জয় করেন, ১৯৮০ সালের ২০ আগস্ট।
শীতকালে প্রথম
শীতকালে প্রথম এভারেস্ট জয় করেন পোল্যান্ডের এল সিচি (ডানে)এবং কে ওয়েলিকি,(বায়ে) ১৯৮০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি।
প্রথম জয়ী দম্পতি
১৯৯০ সালের ৭ অক্টোবর এভারেস্ট জয় করেন এক দম্পতি। স্লোভেনিয়ার এই স্বামী-স্ত্রীর নাম আন্দ্রেজ এবং মারিয়া স্ট্রেমফেলজ।
প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্দীর জয়
২০০১ সালের ২৫ মে প্রথম অন্ধ ব্যক্তি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন যুক্তরাষ্ট্রের এরিক ভিয়েনমায়ার।
দুই ভাই
১৯৯২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। প্রথম সহোদর হিসেবে এভারেস্ট জয় করলেন আলবার্তো ও ফেলিক্স ইনুরাতেগুই।
বাবা-ছেলে
১৯৯০ সালে প্রথম মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন জ্য নোয়েল রোচে এবং তাঁর ছেলে রোচে বারত্রা ওরফে জেবুলন।

১৭ বছরের বারত্রা ছিলেন তখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম বয়সী এভারেস্ট জয়ী।
খোঁড়া হয়েও চূড়া জয়
১৯৯৮ সালে বিশ্ব্ববাসীকে চমকে দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের টমাস হুইটাকের। একটা কৃত্রিম পা নিয়েও দুর্গম এভারেস্টকে পরাভূত করেন তিনি।
প্রথম দুবার
প্রথম দুবার এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার কৃতিত্ব নেপালের নওয়াং গোম্বুর।
সবচেয়ে দ্রুত এভারেস্ট জয়
সবচেয়ে দ্রুত এভারেস্টে ওঠার রেকর্ড অস্ট্রিয়ান ক্রিস্টিয়ান স্টেনগালের।

বেইস ক্যাম্প থেকে চূড়ায় পৌছাতে তিনি সময় নেন মাত্র ১৬ ঘণ্টা ৪২ মিনিট। ঘটনাটি ঘটে ২০০৭ সালে।
সবচেয়ে দ্রুত নেমে আসা
সবচেয়ে দ্রুত চূড়া থেকে নেমে আসার রেকর্ডটি ফ্রান্সের জ্যঁ-মার্ক বোয়াভিনের। তিনি প্যারাগ্লাইডিং করে মাত্র ১১ মিনিটে নেমে আসেন বেস ক্যাম্পে।
প্রথম বাঙালি এর এভারেস্ট জয়
বাঙালি হিসাবে প্রথম এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেন দেবাশীষ বিশ্বাস ও বসন্ত সিংহ রায়।

দেবাশীষের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় আর বসন্ত সিংহের বাড়ি নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে।
সবচেয়ে বেশিবার
এভারেস্টের চূড়ায় কোনো মতে একবার পেঁৗছাটাই বেশির ভাগ মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো।
সেখানে নেপালের আপা শেরপার কাণ্ড শুনলে চোখ কপালে উঠবে। এ পর্যন্ত ২৩ বার এভারেস্টের চূড়ায় পা রেখেছেন তিনি।
সবচেয়ে বেশি সময় এভারেস্ট চূড়ায়
সবচেয়ে বেশি সময় মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে অবস্থানের রেকর্ড নেপালের বাবু চিরি শেরপার।
১৯৯৯ সালে অক্সিজেন ছাড়া ২১ ঘণ্টার বেশি চূড়ায় থাকেন তিনি। শুধু তাই নয়, চমৎকার একটা ঘুমও দিয়ে দেন সেখানে।
সবচেয়ে বেশি বয়সে এভারেস্ট জয়
সবচেয়ে বেশি বয়সে এভারেস্ট জয় করেন বাহাদুর শেরচান।

২০০৮ সালে ২৫ মে এভারেস্ট জয়ের সময় তাঁর বয়স ছিল ৭৬ বছর।
সবচেয়ে কম বয়সে জয়
ঘটনাটা ঘটান আমেরিকান এক কিশোর। জর্ডান রোমেরা নামের এই কিশোরের বয়স যখন মাত্র ১৩ বছর তখনই সে এই বিজয় ছিনিয়ে আনে।
সবচেয়ে বড় অভিযাত্রী দল
এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অভিযাত্রী দল এভারেস্ট জয়ে গেছে চীন থেকে। ১৯৭৫ সালে ৪১০ জনের একটি অভিযাত্রী দল ওই অভিযানে অংশ নেয়।
প্রযুক্তি যখন আশীর্বাদ
ডেস্কস্যার এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগে এভারেস্ট জয় করার পরও অনেক বছর বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়াটি অনেকটা রহস্য হয়েই ছিল মানুষের মাঝে। ১৯৫৩ সালের পর দীর্ঘ ৫০ বছরে এভারেস্ট জয় করেছিলেন প্রায় ৫০০ জন আরোহী। সেখানে গত সাত বছরে ২৯ হাজার ৩৫ ফুট উঁচু চূড়াটি জয় করেছেন আড়াই হাজার মানুষ।মুসা ইব্রাহীম যে সময় হয় করেন সেই সপ্তাহেই এভারেস্টজয়ী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন তিন শতাধিক অভিযাত্রী। 'এভারেস্টকে আমার আর বিশেষ কোনো স্থান মনে হয় না। কারণ অন্য পাঁচটা ব্যস্ত এলাকার মতোই সেখানে এখন মানুষ গিজগিজ করে।' কয়েক বছর ধরে বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়াটি বিজয়ের 'হিড়িক' পড়ে যাওয়ায় এ মন্তব্য করেছেন পাঁচবার এভারেস্টজয়ী যুক্তরাষ্ট্রের জেক নরটন।
মূলত ২০০৩ সাল থেকেই এভারেস্টজয়ীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০০৭ সালে সর্বোচ্চ ৬৩০ জন বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়াটি জয় করেন। চলতি বছরেও এ সংখ্যা চার শর কম হবে না। জয়ীদের তালিকায় কেবল পুরুষই নয়, রয়েছেন নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরাও। গত রবিবারেই মাত্র ১৩ বছর বয়সে চূড়ার ওঠার রেকর্ড গড়ে আমেরিকার শিশু জর্ডান রোমেরো। ২০০৭ সালে জাপানি নাগরিক কাতসুকে ইয়ানাগিসাওয়া ৭১ বছর বয়সে চূড়ায় উঠে চমক লাগিয়ে দেন। একই বছরে চূড়ায় ওঠেন কৃত্রিম হৃদযন্ত্র স্থাপন করা এক কানাডীয় নারী। এবার সহ আপা শেরপা চূড়া জয় করলেন ২০ বার।
 হঠাৎ করেই এভারেস্ট জয়ে সফলতার হার বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিকে 'প্রযুক্তির আশীর্বাদ' হিসেবেই অভিহিত করছেন জেক নরটন। তাঁর ভাষায়, 'এভারেস্ট চূড়ায় আরোহণের মানচিত্র এখন আমাদের মুখস্থ। গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) আরোহীদের হাতে হাতে। তা ছাড়া পথপ্রদর্শক ও দেহরক্ষী হিসেবে সার্বক্ষণিক শেরপা তো রয়েছেই। রয়েছে আধুনিক সরঞ্জাম।'
আরোহীদের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করা ব্রিটিশ নাগরিক কেনটন কুল বলেন, 'হিলারি ও নোরগে যখন এভারেস্টে যান, তখন তাঁরা সম্পূর্ণ অচেনা এক জগতের খোঁজে ছিলেন। এখন কিন্তু বিষয়টি আর তেমন নেই। এমনকি আরোহীদের সহায়তার জন্য বিভিন্ন স্থানে স্থায়ীভাবে দড়ি ও মই লাগানো রয়েছে।'
কুলের মতে, উন্নত প্রযুক্তির পোশাক ও সরঞ্জাম পর্বতারোহণের কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে।তিনি বলেন, 'পাহাড়ের চূড়ায় ভালো দস্তানা, জুতা ও কাপড় বড় ব্যবধান গড়ে দেয়। এসব বিশেষায়িত কাপড় প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যেও আরোহীদের উষ্ণ রাখে। তা ছাড়া কৃত্রিম অক্সিজেনের ব্যবস্থাও এখন অনেক আধুনিক হয়েছে। রয়েছে স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত আধুনিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস। এসব কারণেই এভারেস্ট জয় আগের চেয়ে এত সহজ ও নিরাপদ হয়েছে।'
এ মৌসুমে (এপ্রিল-মে) অবশ্য অনুকূল আবহাওয়াও আরোহীদের অনেক সহায়তা করেছে। এ পর্যন্ত ২১৬ জন অভিযাত্রী এভারেস্ট চূড়ায় আরোহণের পথে প্রাণ হারালেও এ বছর এখনো পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। অভিযাত্রীদের সফলতার হারও ছিল অনেক বেশি। নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, এ বছর এভারেস্টে আরোহণের জন্য অনুমতি নিয়েছেন ২৩৩ জন বিদেশি। তিব্বত অংশ থেকে যাত্রা করে এভারেস্টজয়ের সফলতার হার নেপালের তুলনায়ও বেশি। মুসা ইব্রাহীম এ পথেই চূড়ায় উঠেছেন। তাঁর ২৬ জনের দলের সবাই সফলভাবে এভারেস্ট জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। মুসার এক দিন আগে তাঁর ব্যবহৃত পথ ধরেই সবচেয়ে কম বয়সে এভারেস্ট জয়ের রেকর্ড গড়ে শিশু রোমেরো। সোমবার কানাডার নাগরিক সেইন্ট জার্মেইন তো কোনো রকম কৃত্রিম অক্সিজেন সঙ্গে না নিয়েই এভারেস্ট জয় করেছেন।
বছর বছর শতাধিক আরোহী এভারেস্ট চূড়ায় উঠছেন বলে গুরুত্ব কমে যাচ্ছে জয়ীদেরও। ১৯৫৩ সালে হিলারি ও নোরগের এভারেস্ট জয়ের পর পুরো বিশ্বেই আলোড়ন উঠেছিল। অথচ গত রবিবার রোমেরো মাত্র ১৩ বছর বয়সে এভারেস্ট জয় করার পর তার নিজ দেশের পত্রপত্রিকায়ও তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। একই দিনে সবচেয়ে কম বয়সী ভারতীয় হিসেবে এভারেস্ট জয় করা ১৬ বছর বয়সী অর্জুন বাজপেয়িকে নিয়েও তেমন মাতামাতি হয়নি। তবে নরটন মনে করেন, স্বাভাবিক হয়ে এলেও মানুষের এভারেস্ট জয়ের আকাঙ্ক্ষা চিরদিনই থাকবে। যদিও ইচ্ছে থাকলেই সেটি সম্ভব হবে না সবার পক্ষে। কারণ নেপাল বা তিব্বত থেকে এভারেস্টে আরোহণের অনুমতি সংগ্রহ করতেই মাথাপিছু ফি দিতে হয় ১০ হাজার ডলার। এ ছাড়া আরোহণের অন্যান্য ব্যয় তো আছেই।
(পরিবর্তন ডট কম)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়