Monday, May 27

0 কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদঃ ইতিহাস ঐতিহ্য একটি পর্যালোচনা (১ম পর্ব)

শাহ নজরুল ইসলামহযরত শাহজালাল (রঃ) ৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত পূণ্যভূমি সিলেট। বাংলা ও আসামের মিলন কেন্দ্র, সুরমা-কুশিয়ারা, খোয়াই, ইটাখাল, মনু, পিয়াইন নদী, টাঙ্গুয়া, হাইল, হাকালুকি হাওর বিধৌত খাসিয়া জৈন্তিয়া লাউড় মাধবকুন্ডের শৈল শ্রেণীর পাদদেশে বিস্তৃত দুটি পাতা একটি কঁড়ির শ্যামল সিলেট-ধনের দেশ, ধানের দেশ গানের দেশ ও প্রাণের দেশ। সুদূর ইয়েমেনের দীপ্ত দরবেশ হযরত শাহজালাল (রঃ) আজ থেকে সাতশত বছর আগে সিলেটে শুভাগমন করে মহানবী (সঃ) প্রতিষ্ঠিত মদীনা নগর রাষ্ট্রের অনুরূপ একটি ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে যে একটি উন্নত সভ্যতার পত্তন করেছিলেন তার দিপ্তি ছড়িয়ে পড়েছিল  সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। তারই স্মৃতিধন্য এই  সিলেট বাংলাদেশের সম্পদ, সৌন্দর্য সমৃদ্ধির প্রতীক, সুপ্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক এবং শিক্ষা সাহিত্য শিল্প সংস্কৃতি চর্চার গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারে ধন্য। হযরত শাহজালাল (রঃ) এর আগমনের পর হতে সিলেটের বুকে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির লালন উপনিবেশিক যুগের পূর্ব পর্যন্ত যে ধারাবাহিকতায় বিকাশিত হচ্ছিল তা বিজাতীয় দুরভিসন্ধিতে বিঘ্নিত হয়। তাই স্বভাবতই সিলেট ভূমির বরেণ্য চিন্তাবিদরা হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মিশনকে অব্যাহত রাখতে একটি সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন লালন করে আসছিলেন। তাঁদের সে লালিত স্বপ্নের ফসল রূপে ১৯৩৬ সন থেকে কাজ করছে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ সিলেট। কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ ৭৬ বছরে পা রাখলো। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে এ অঞ্চলের সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চায় তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। আমাদের বিচক্ষণ পূর্বসূরীরা ১৯৩৬ খ্রি. ১৬ ই সেপ্টেম্বর এ প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন করেন। বৃটিশ অধিকৃত ভারত বর্ষের এ অঞ্চলের মুসলিম জনগোষ্ঠির জাগরণের ল্েয এবং সৃজনশীলতা ও মনন চর্চার জন্যই এর প্রতিষ্ঠা। এ জন্যে তাঁদের কঠোর পরিশ্রম ও সাধনা করতে হয়েছে। বহু চড়াই উৎরাই অতিক্রম করে সাহিত্য সংসদ আজ বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ। সিলেট অঞ্চলের সকল বুদ্ধিজীবী সাহিত্যিক সাংবাদিক, কবি, লেখক, রাজনীতিবিদ এ প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ও এত্থেকে উপকৃত হয়েছেন এবং হচ্ছেন। সাধারণতঃ ব্যক্তির জীবনিতিহাস লেখা ও প্রচার করা হয়। কিন্তু ব্যাক্তিত্বের বিকাশে যে সব সংগঠন কিংবা সমিতি যুগযুগ ধরে কাজ করে এর ইতিহাস কদাচিৎ লিপিবদ্ধ হয়। সিলেট অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্য লালন ও বিকাশের মূল স্তম্ভ ও বিশাল বটবৃক্ষ। কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য লেখা হয়েছে। কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার- এই কাজটি সম্পাদনা করেছেন কবি রাগিব হোসেন চৌধুরী। তাঁর রচিত ৪৮০ পৃষ্ঠার গ্রন্থটির নাম ‘সিলেটের শত বর্ষের ঐতিহ্য-কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ’ এটি-বিগত শত বর্ষের এ অঞ্চলের সাহিত্য সংস্কৃতিক আন্দোলনের এক নির্ভরযোগ্য বিশ্বস্থ দলীল। সংসদের বয়স ৭৬ হলেও সংসদ প্রতিষ্ঠার প্রোপট রচনার ইতিহাস আরো পূর্বের, এজন্য শতবর্ষের কথা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এ অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্যের সন্ধানী গবেষক সত্যসন্ধ লেখক মরহুম অধ্যাপক আসাদ্দর আলী লিখেছেন,‘ইতিহাসেরও যেমন ইতিহাস থাকে ঠিক তেমনি যে কোন দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান এবং পত্র-পত্রিকা পর্যন্ত তাদের নামকে গৌরবময় ইতিহাসের অঙ্গ হিসাবে অনন্তকাল পর্যন্ত স্বার্ণারে লিখিত থাকার মত ব্যবস্থা করে নেয়। ইতিহাস সৃষ্টিকারী এ জাতীয় একটি প্রতিষ্ঠানেরই নাম-‘কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, সিলেট, তার মুখপত্রের নাম মাসিক ‘আল্-ইসলাহাহ্’ এবং এ দু’এর প্রাণ পুরুষের নাম হলো- মুহাম্মদ নূরুল হক। একদা সিলেটবিবাগের কিছু সংখ্যক সংস্কৃতি প্রেমী বিজ্ঞ মুসলমান সিলেট শহরস্থ হিন্দু স¤প্রদায়ের ‘সাহিত্য পরিষদ’- এর ন্যায় নিজেদের  জন্যে পৃথক একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্যে নিদারুণভাবে প্রয়োজন অনুভব করেন। তারই ফলশ্র“তি স্বরূপ সিলেট শহরের বুকে ‘মুসলিম সাহিত্য সংসদ, সিলেট’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান শাহজালাল (রহঃ) এর দরগা শরীফের তৎকালীন মুতাওয়াল্লী সর-এ কওম জনাব আবু জাফর আব্দুল্লাহ সাহেবকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে ১৯৩৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তারিখে। প্রাথমিক অবস্থায় যে ১৭ জন স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব এ প্রত্যিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং যাঁদেরকে নিয়ে ‘মুসলিম সাহিত্য সংসদ, সিলেট ’ এর প্রথম কার্যাকারী সমিতি গঠিত হয়েছিলো তারা হলেন– ১। বিশ্বখ্যাত মরমী কবি হাছন রাজার ঔরসজাত সন্তান স্বনামধন্য খানবাহাদুর দেওয়ান একলিমুর রাজা চৌধূরী কাব্য বিশারদ, এম.এল.এ., ২। এডভোকেট জনাব আশরাফ উদ্দীন মোহাম্মদ চৌধুরী এম.এল.এ., ৩। জনাব মোহাম্মদ মকবুল হোসেন চৌধূরী কাব্য বিশারদ, এম.এল.এ., ৪। সর-এ কওম জনাব আবু জাফর আব্দুল্লাহ, ৫। জনাব সৈয়দ আব্দুল হাফিজ, ৬। জনাব দেওয়ান ওহিদুর রাজা চৌধুরী, ৭। জনাব দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ এম.এ., ৮। জনাব সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বি.এ., ৯। জনাব ইকবাল হোসেন,১০। জনাব শেখ মোহাম্মদ সিকন্দর আলী, ১১। জনাব মৌলভী মুহাম্মদ নূরুল হক, ১২। জনাব মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, ১৩। জনাব আবু মুক্তাদির মোহাম্মদ রইস ১৪। জনাব আবু মোহাম্মদ আব্দুজ্জাহের ১৫। জনাব মোহাম্মদ আব্দুল বারী চৌধুরী বি.এ. ১৬।  জনাব আব্দুল হাই এবং ১৭। জনাব নূর উদ্দিন। ‘মুসলিম সাহিত্য সংসদ, সিলেট’ এর কার্যকারী সমিতির সিদ্ধান্তক্রমে পরবর্তীকালে যৌক্তিক কারণে সংস্থাটির পূর্বে ‘কেন্দ্রীয়’ শব্দটি সংযুক্ত হয় এবং সংস্থাটি শেষ পর্যন্ত ‘কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, সিলেট’ নাম ধারণ করে যা এখনও বলবৎ রয়েছে। উল্লিখিত ‘কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, সিলেট’- এর প্রথম কার্যকরী সমিতির ১১নং সদস্য হিসেবে যে মৌলভী মুহাম্মদ নূরুল হক সাহেবের নাম দেখা যাচ্ছে তাঁর জন্মস্থান বিশ্বনাথ থানার দশঘর গ্রামে; ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে জন্মেছিলেন তিনি। চলবে……

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়