Friday, April 26

রূপার গ্রাম ভাকুর্তা: তৈরি হচ্ছে রূপার অলঙ্কার

রাজধানী শহরের গা ঘেঁষে মোহাম্মদপুর, আদাবর বেড়িবাঁধের ওপারে তুরাগ নদী পেরিয়ে যে জনপথ তার নাম ভাকুর্তা।

সাভার উপজেলার এই ইউনিয়নটিতে রয়েছে ৩৬টি গ্রাম। লেখাপড়ার দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা অবহেলিত এই জনপথের বেকারদের অনেকেই একসময় বেপরোয়া চলাফেরায় অভ্যস্ত ছিলেন।

তবে সময়ের পরিবর্তনে এখানকার গ্রামগুলোতে ছোটবড়, নারীপুরুষ, ছেলেবুড়ো সবাই এখন ব্যস্ত রূপার অলঙ্কার তৈরিতে।

এখন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রূপার অলঙ্কার তৈরি করে তাদের ভেতর ফিরে এসেছে সচ্ছ্বলতা।

এখন তারা যেন আধুনিক এ সমাজের উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

গ্রামগুলোর মধ্যে চুনারচর, ডোমরাকান্দা, সোলারমার্কেট, খাগুড়িয়া, নলাগুড়িয়া, মোগরাকান্দা, চাপরা, কান্দিভাকুর্তা, হিন্দুভাকুর্তা, বাহেরচর, মুশরিখোলা, ঝাউচর, লুটেরচর, চরতুলাতুলি, চাইরা সবখানে ঘুরে-ফিরে অলঙ্কার তৈরির একই রকম দৃশ্য চোখে পড়ে।

এরই মধ্যে কৃষিকাজের পাশাপাশি গ্রামের লোকজন অলঙ্কার তৈরির শিল্পকে তাদের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাই, বাড়ির পুরুষ সদস্যের পাশাপাশি নারী সদস্যরাও অলঙ্কার তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

এছাড়া পহেলা বৈশাখের কারণে তাদের কাজ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই আবার নাওয়া-খাওয়ার সময় পাচ্ছেন না বলেও জানিয়েছেন।

রূপার অলঙ্কার তৈরির কারিগররা হিন্দু ভাকুর্তা চৌরাস্তা এলাকায় অফিস নিয়ে গড়ে তুলেছেন ভাকুর্তা রৌপ্য ব্যবসায়ী সমিতি।

সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক বাবু লাল দাস বাংলানিউজকে জানান, ভাকুর্তা ইউনিয়নে প্রায় সাত হাজার নারী-পুরুষ রৌপ্য অলঙ্কার তৈরি পেশায় জড়িত।

রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কারিগররা অর্ডার নিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এখান থেকে অলঙ্কার তৈরি করে তা সরবরাহ করে থাকেন। এক সময় শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন রূপার অলঙ্কার তৈরি পেশায় জড়িত থাকলেও বর্তমানে মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকেই এই পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন।

বংশ পরম্পরায়  হিন্দু ধর্মের লোকজন সীতাহার, কানের দুল, ঝুমকা, চেইন, পায়ের নূপুরসহ নানা অলঙ্কার তৈরি করে আসছেন। তবে এখন গ্রামগুলোতে প্রবেশ করলে প্রত্যেক বাড়িতেই অলঙ্কার তৈরির দৃশ্য চোখে পড়ে।

হিন্দু ভাকুর্তা গ্রামের জোসনা রানী, কনা রানী, মমতা রানী, শিপু রানীসহ অনেকেই জানান, পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বিভিন্ন মার্কেট থেকে সীতাহার, কানের দুল, হাতের বালা ইত্যাদির অর্ডার নিয়ে আসেন। এর মধ্যে পাঁচশ থেকে সাতশ টাকায় একটি চেইন অথবা নূপুর তৈরি করে দেওয়া যায়। এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে অর্ডার হলে একটু বেশি মজুরি পাওয়া যায়।

তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা রূপার পাশাপাশি তামা দিয়েই অলঙ্কার তৈরি করে থাকেন।

ডোমরাকান্দার রেজিনা আক্তার, চুনার চরের ফুলেজা বেগম, মোগরা কান্দার নাসিমা, ফিরোজাসহ অনেকেই ঘর-সংসার সামলানোর পাশাপাশি অলঙ্কার তৈরি করে পরিবারে সচ্ছ্বলতার মুখ দেখেছেন। ব্যবসার সফলতায় কেউ কেউ জমি কিনে সুন্দর পাকা বাড়িও নির্মাণ করেছেন।

কিন্তু রৌপ্য ব্যবসায় সফল সুশীল দাস, রবীন্দ্র নাথ, আবদুল বাতেন, জাহাঙ্গীর আলম, বাবু লাল দাস, পরিতোষ সরকার, সাধু সরকারসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, এখানকার কারিগররা বিভিন্ন সময় পুলিশি হয়রানির শিকার হন। অর্ডার করা মালামাল বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতে গিয়ে পথে নানা প্রশ্নবানে জর্জড়িত হতে হয় তাদের।

তাই, এই শিল্পের উন্নয়নে পুলিশি হয়রানি থেকে রেহাই পেতে তারা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়