আগামি ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে বলে জানা গেছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দলটিতে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে উপজেলা এবং ৩০শে নভেম্বরের মধ্যে জেলা পর্যায়ের কাউন্সিল শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানিয়েছেন, তৃণমূলের বিভক্তি ও দলীয় কোন্দলের কারণে অনেক জেলা-উপজেলায় নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিল করা নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, কাউন্সিলে বর্তমান কমিটি অনেকটাই কাটছাঁট হচ্ছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কেউ কেউ বাদ পড়তে পারেন দায়িত্ব থেকে। অন্যদিকে ক্লিন ইমেজের ত্যাগী নেতাদের আনা হবে নতুন কমিটিতে। নতুন কমিটিতে গুরুত্ব পাবে তরুণরা। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা এসব তথ্য জানিয়েছেন। গত ১৫ই সেপ্টেম্বর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ বৈঠকে ২৯শে ডিসেম্বর দলের জাতীয় কাউন্সিল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকে বর্তমান কমিটির মেয়াদ ৩১শে জানুয়ারি পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। এ সময়ের মধ্যে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কাউন্সিল করার প্রস্তুতি নেয়া হয়।
দলের নেতারা জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়েই জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে এবং কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ জানান, ডিসেম্বরে কাউন্সিল করার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা ঠিক রেখেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এখন উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে কাউন্সিলের কাজ চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই এ প্রক্রিয়া শেষ হবে। নতুন নেতৃত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। এর মাধ্যমে নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।
কাউন্সিলের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন জানান, কাউন্সিল প্রক্রিয়া চলছে এবং চলতি বছরের মধ্যেই এ প্রক্রিয়া শেষ হবে। কাউন্সিল প্রক্রিয়া নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে কিনা জানতে চাইলে একটি একটি সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, লক্ষ্য থাকলেও অনেক জেলা এবং উপজেলা দলীয় কোন্দলের কারণে কাউন্সিল প্রক্রিয়া বিঘি�ত হচ্ছে। এ অবস্থায় চলতি বছর সব উপজেলা এবং জেলার কাউন্সিল করা সম্ভব হবে না।
সূত্র জানায়, নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সাজানো হবে। সে ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়নের ঝামেলা এড়ানোর বিষয়টিও মাথায় থাকবে। দলের নেতৃত্ব এবং সরকারের দায়িত্ব এই দুটিকে আলাদা রাখার বিষয়েও চিন্তাভাবনা হচ্ছে। সব বিবেচনায় স্থানীয় পর্যায়ে এবং সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন পরীক্ষিত নেতা কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাবেন এমন আলোচনা রয়েছে।
আওয়ামী লীড়ের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলতি বছরের ২৪শে জুলাই বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৪শে জুলাই দলটির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।
কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যথাসময়ে দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে বলে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এক বছর আগে থেকেই বলে আসছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে দলের কাউন্সিল করা সম্ভব হয়নি। কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ কমিটির মেয়াদ ৬ মাস বাড়িয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, বর্তমান কমিটির মেয়াদ প্রায় সাড়ে তিন বছর হতে চললেও কমিটির অনেক নেতাই কাজের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা দেখাতে পারেননি। যেসব তরুণ নেতাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে উচ্চ প্রত্যাশা নিয়ে আনা হয়েছিল তাদের কেউ কেউ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। বিশেষ করে ৭ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের কেউ কেউ নিজেদের সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেননি। কাউন্সিলে তাদের পদে পরিবর্তন আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এছাড়া প্রেসিডিয়ামে নতুন করে যে ক�জন নেতাকে আনা হয়েছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেননি। বরং, উল্টো সমালোচনা কুড়িয়েছেন। কাউন্সিলে তারা পদ হারাতে পারেন। এক্ষেত্রে দলের পরীক্ষিত নেতাদের আনা হতে পারে। যদিও আলোচনা রয়েছে প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং আবদুল জলিল ফের প্রেসিডিয়ামে আসছেন। তবে দলের শীর্ষ পর্যায়ে এখন পর্যন্ত তাদের দলের মূল ধারায় আনতে ইতিবাচক আগ্রহ দেখানো হয়নি। দলের থিঙ্কট্যাংকেই তাদের রাখার পক্ষে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। যদিও দলের একটি অংশ চাইছে ক্রাইসিস ম্যানেজার হিসেবে এসব নেতাকে মূলধারার নেতৃত্বে রাখতে।
এদিকে নতুন কমিটি তিন বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করলেও এ পর্যন্ত নতুন কমিটি তৃণমূলের কাউন্সিল প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু হলেও দলের ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৭১টি জেলার কার্যক্রম চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। এসব জেলার কোন কোনটির কমিটির মেয়াদ ১০ থেকে ১২ বছর আগেই শেষ হয়েছে। কোন কোন জেলা কমিটির কার্যক্রম চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। একই কমিটি দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে থাকায় জেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক স্থবিরতা বিরাজ করছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দলাদলি লেগে আছে অনেক জেলায়। কিছুদিন পর পর বিভিন্ন ঘটনায় এর প্রকাশও হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর মহানগর ও নীলফামারী জেলা কমিটি ছাড়া অন্যসব জেলায় দলীয় কার্যক্রম চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। ঢাকা বিভাগের ১৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ১৬টিরই সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৩ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে। বাকি দুটি জেলার সর্বশেষ সম্মেলন হয় ১৯৯৭ সালে। চট্টগ্রাম বিভাগের ১৪টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরে ২০০৬ সালে সম্মেলন হলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়নি। কমিটি নিয়ে চলছে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে �ায়ুযুদ্ধ। অন্য জেলাগুলোর মধ্যে প্রত্যেকটি জেলার কাউন্সিল হয় ২০০৬ থেকে এর আগের বছরগুলোতে।
রাজশাহী বিভাগের ৯টি জেলার মধ্যে রাজশাহী মহানগর ও রাজশাহী জেলা কমিটির সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৫ সালে। ২০০৩ সালে জয়পুরহাট, ২০০৪ সালে বগুড়া ও নাটোর এবং ২০০৫ সালে নওগাঁ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা বিভাগের ১১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ২০০৩ সালে যশোর ও বাগেরহাট, ২০০৪ সালে খুলনা মহানগর, খুলনা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, নড়াইল ও সাতক্ষীরা এবং ২০০৬ সালে ঝিনাইদহ জেলার সর্বশেষ সম্মেলন হয়। সিলেট বিভাগের ৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে সিলেট মহানগর ও সিলেট জেলার সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে ২০০৫ সালে। এ দু�জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন পেয়েছে গত বছর। এছাড়া ১৯৯৭ সালে সুনামগঞ্জ, ২০০৩ সালে হবিগঞ্জ ও ২০০৬ সালে মৌলভীবাজার জেলার সর্বশেষ সম্মেলন হয়। বরিশাল বিভাগের ৭টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির মধ্যে পিরোজপুর জেলার সর্বশেষ সম্মেলন হয় ১৯৯২ সালে। বরিশাল জেলার সর্বশেষ সম্মেলন হয় ১৯৯৮ সালে। ১৯৯৭ সালে পটুয়াখালী, ২০০৫ সালে বরগুনা ও ভোলা এবং ২০০৬ সালে ঝালকাঠি জেলার সর্বশেষ সম্মেলন হয়।
রংপুর বিভাগের ৯টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ২০০৭ সালে রংপুর জেলার সর্বশেষ সম্মেলন হয়। এছাড়া ২০০৩ সালে কুড়িগ্রাম, ২০০৪ সালে পঞ্চগড় ও দিনাজপুর, ২০০৫ সালে ঠাকুরগাঁও ও গাইবান্ধা এবং ২০০৬ সালে লালমনিরহাট জেলার সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।ফেয়ার নিউজ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়