Friday, November 2

নিখোঁজ এম.ইলিয়াস আলীকে ঘিরে কানাইঘাট বিএনপি’র রাজনীতি চাঙ্গা

নিজাম উদ্দিন/কাওছার আহমেদ:
মুক্ত স্বাভাবিক অবস্থায় রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় থাকার চেয়ে কি ‘নিখোঁজ’ বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এম.ইলিয়াস আলীই বেশী জনপ্রিয়। ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর থেকে গত সাড়ে ছয় মাসে কানাইঘাট উপজেলা বিএনপি, অঙ্গসংগঠনের এমন তৎপরতায় প্রশ্ন জেগেছে কানাইঘাটের রাজনৈতিক অঙ্গনে। কানাইঘাটে বিএনপি’র রাজনীতি এখন চলছে ইলিয়াস আলীকে ঘিরে। নানা উপ দলের বিভক্ত বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করে কানাইগাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরী, কানাইঘাট জকিগঞ্জ বিএনপি’র প্রধান সমন্বয়কারী চাকসুর সাবেক আপ্যায়ন সম্পাদক সিলেট-৫ আসন থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সমমনা ১৮দলীয় ঐক্যজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী মামুনুর রশিদ মামুন ইলিয়াস আলীকে ঘিরে রাজনীতির মাঠে ঝড় তোলেতে সক্ষম হয়েছেন। এম.ইলিয়াস আলীর বিশ্বস্থ ও আস্থাবাজন মামুনুর রশিদ মামুনের রাজনৈতিক দুরদর্শীতায় বিএনপি এখন তৃণমূল পর্যায়ে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে কানাইঘাটে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। ইলিয়াস আলীকে ঘিরে বিএনপি অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা দলের প্রতিটি কর্মসূচী উপজেলা সদরে স্বতস্ফুর্তভাবে পালন করে যাচ্ছেন। সরকারের নানা ব্যর্থতার পাশাপাশি ইলিয়াস আলী গুম ইস্যুকে কেন্দ্র করে এবং ওয়ান ইলেভেনের সময় বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দেশ থেকে পলাতক বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাবেক যুগ্ম মহসচিব কানাইঘাটের বাসিন্দা আবুল হারিছ চৌধুরী উন্নয়নের কথা তুলে ধরে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করার জন্য নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ে বিএনপি বিভিন্ন ভাবে সভা সমাবেশ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী মামুনুর রশিদ প্রতিনিয়ত মাঠ পর্যায়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে গণ সংযোগ থেকে শুরু করে বিএনপিকে সু-সংগঠিত করে যাচ্ছেন। জামায়াতকে বাদ দিয়ে ১৮দলীয় ঐক্যজোটের অর্ন্তভুক্ত জমিয়তে উলামা ইসলাম খেলাফত মজলিস ইসলামী ঐক্যজোটের তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে ১৮দলীয় ঐক্যজোটের উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটি গঠন করেছেন। পাশাপাশি দীর্ঘদিন থেকে বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলোর যেখানে কোন অস্থিত্ব ছিল না সেখানে বর্তমানে বিএনপি’র সহযোগী সংগঠন শ্রমিকদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, ওলামাদল, ছাত্রদল, জাসাসসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে সহযোগী সংগঠনগুলি রাজপথে ইলিয়াস আলী ইস্যুকে মাঠ গরম করতে সক্ষম হয়েছেন। আবুল হারিছ চৌধুরীর জন্ম স্থান কানাইঘাটে পূর্বে আদিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক কাঠ, খড় পুড়িয়েছিলেন নিখোঁজ হওয়া বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম.ইলিয়াস আলী। কিন্তু তেমন সুবিধা করতে পারেননি। গত ১৭এপ্রিল এম.ইলিয়াস আলী ঢাকার বনানী থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর সব দ্বন্ধ-কোন্দল ভুলে স্থানীয় বিএনপি’র উভয় বলয়ের নেতাকর্মীরা নেমেছিলেন ইলিয়াস আলীর সন্ধানের আন্দোলনে। কানাইঘাটে ইলিয়াস আলীর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠা আবুল হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। কিন্তু বর্তমানে তিনি ইলিয়াস আলী ইস্যুতে আন্দোলনে নামছেন। গত ৩০অক্টোবর কানাইঘাট বাজারে ইলিয়াস আলীর সন্ধানের দাবীতে আয়োজিত বিশাল জনসভায় আশিক চৌধুরী উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। জোট সরকারের আমলে দলের স্থায়ী কমিটি প্রভাবশালী সদস্য প্রয়াত এম.সাইফুর রহমানকে চ্যালেঞ্জ করে আলোচিত হন এম.ইলিয়াস আলী। এর পর থেকেই মূলত সাইফুর ও ইলিয়াস গ্র“পে বিভক্ত হয়ে পড়ে কানাইঘাট বিএনপি। উভয় বলয় আবার স্থানীয়ভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক আবুল হারিছ চৌধুরীর প্রতি আস্থাশীল ও নেতৃত্বে বিশ্বাসী। সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম.সাইফুর রহমানের মৃত্যু ও হারিছ চৌধুরী আত্ম গোপনের পর ৯০এর সৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা ও ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের কানাইঘাটের আহ্বায়ক মামুনুর রশিদ মামুনকে ঘিরেই চলছে স্থানীয় বিএনপি’র রাজনীতি। প্রায় দু’মাস পূর্বে ইলিয়াস আলী মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ উপজেলা ও পৌরশাখা গঠিত হয়। এ পরিষদের উদ্যোগে গত ৩০অক্টোবর ইলিয়াস আলীর সন্ধানে কানাইঘাটে এক বিশাল শো-ডাউন করা হয়। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবী এটি কানাইঘাটের রাজনীতির ইতিহাসে সর্ববৃহৎ জনসভা। এ জনসভায় ইলিয়াস আলীর অনুসারী জেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহসভাপতি দিলদার হোসেন সেলিম, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আব্দুল গাফ্ফার সহ জেলার সিনিয়র নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। জেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ সিলেট-৫ আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মামুনুর রশিদ মামুনকে প্রার্থী ঘোষণা করে তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য দলের নেতাকর্মী ও কানাইঘাটবাসী সহযোগিতা কামনা করেন। এর মাস খানেক পূর্বে নবগঠিত ১৮দলীয় জোটের উদ্যোগে ইলিয়াস আলীর সন্ধানের দাবীতে আরেকটি শো-ডাউন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে ইলিয়াস ইস্যু নিয়ে সাবেক ছাত্রনেতা মামুনুর রশিদ দলকে সু-সংগঠিত করে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন। অপরদিকে হারিছ চৌধুরীর উন্নয়নকে পুঁজি করে উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীও আগামী নির্বাচনে সিলেট-৫ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন। তিনি জনগণের সমর্থন লাভের প্রত্যাশা নিয়ে কৌশলে মাঠে তৎপর রয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মামুনুর রশিদ বলেন, ইলিয়াস আলীকে নিয়ে শুধু কানাইঘাট বা বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে আন্দোলন হচ্ছে। জাতীয়তাবাদী ও গণতন্ত্র প্রিয় মানুষ ইলিয়াস আলীকে জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় ফিরে পাওয়ার জন্য আমরা আন্দোলন করছি। আশিক চৌধুরীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, দলের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা গুটি কয়েক সরকারী দলের এজেন্ট ছাড়া কানাইঘাট উপজেলা বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছে। বিএনপিকে কানাইঘাটের সর্ববৃহত্ত রাজনৈতিকদল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে কানাইঘাটের মাটি আর মানুষের নেতা আবুল হারিছ চৌধুরী উন্নয়ন ও এম.ইলিয়াস আলী গুমের বিষয়টি তোলে ধরে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন ও দলের যে কোন আন্দোলন সংগ্রামের জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রস্তুত।






শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়