ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের জালিয়াতি, অপরাধ, অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য মাঠে নামানো হচ্ছে শক্তিশালী বিশেষ টিম। ১৫টি দলে বিভক্ত হয়ে ৫০ জন কর্মকর্তা মাঠপর্যায়ে ব্যাংকগুলোর অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় এ ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হয়েছে। এ ভিজিলেন্স টিমের অন্যতম লক্ষ্যই ব্যাংকিং খাতের বড় বড় আর্থিক জালিয়াতির ঘটনা খুঁজে বের করা। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বড় বড় জালিয়াতির ঘটনা শনাক্ত করা এবং ঘটনার আগাম পূর্বাভাস পাওয়ার কৌশল ও যে কোনো ঘটনার সূত্র ধরে বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনা অব্যাহতভাবে আবিষ্কারের চেষ্টা করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ব্যাংকি খাতের জালিয়াতি প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ দলকে সহায়তা করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ, আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট, আইটি অপারেশন্সসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ। কারণ হলমার্কের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনার জের ধরে পরবর্তীতে দেশজুড়েই বিভিন্ন ব্যাংকে জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে শত শত কোটি টাকা জালিয়াতির একাধিক ঘটনাও ধরা পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাতে আরো বড় ধরনের অনিয়ম ও কেলেঙ্কারি থাকার আশঙ্কা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর এজন্যই ব্যাংকিং খাতের জালিয়াতি ও অনিয়ম রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ দলকে মাঠে নামাতে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ ভিজিলেন্স টিম সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর শাখাতেও তদন্ত চালাবে। এক্ষেত্রে তদন্তকারীরা ব্যাংকিং খাতে নতুন কোনো ধরনের জালিয়াতির ঘটনা অনুসন্ধান করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ উদ্যোগে ব্যাংকিং খাতে ঘটে যাওয়া বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। কারণ ইতিমধ্যে সোনালী ব্যাংকের ৫৪টি শাখায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১৯টি পরিদর্শন দলের ঝটিকা পরিদর্শন করে। পরিদর্শন দলের তদন্তে ভুয়া ঋণপত্র খুলে দেশে কর্মরত ২৭টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৫শ� কোটি টাকা তুলে নেয়ার ঘটনা ধরা পড়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারাই টাকা আত্মসাতে পুরোপুরি সহায়তা করার প্রমাণ পেয়েছে তদন্তকারী দল। ব্যাংক শাখা তদন্তকালে ভিজিলেন্স টিমের সদস্যরা আমদানি-রফতানি ব্যবসার ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ বিল কেনা (আইবিপি), আমদানির ক্ষেত্রে লোন এগেইনস্ট ট্রাস্ট রিসিপ্ট (এলটিআর), রফতানির ক্ষেত্রে বৈদেশিক বিল কেনা (এফবিপি) এসব ব্যাংকিং উপকরণ খতিয়ে দেখবে।
সূত্র আরো জানায়, দীর্ঘ দু�দশকেরও বেশি সময় ধরেই এদেশে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা ফেরত না দেয়ার সংস্কৃতি চালু রয়েছে। অনেক অসাধু চক্রই নানা কৌশলে ব্যাংক থেকে টাকা হাতিয়ে উধাও হয়ে গেছে। ইতিপূর্বে ২০০৭ সালে চট্টগ্রামের এক অখ্যাত ব্যবসায়ী বন্দরনগরের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে স্থানীয় ঋণপত্রের স্বীকৃতিপত্র দিয়ে ৬২২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এর আগে ২০০৬ সালে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ওরিয়েন্টাল ব্যাংক থেকেও ৫৯৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে। এরও আগে ২০০২ সালে ওম প্রকাশ আগরওয়াল নামে এক ব্যবসায়ী ৫টি ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা তুলে নিয়ে উধাও হয়ে যান। এখন থেকে ব্যাংকিং খাতের এধরনের জালিয়াতি ও অনিয়ম রোধে সক্রিয় থাকবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ দল। এজন্য ভিজিলেন্স টিমের সদস্যদেও ব্যাংকিং খাতের বড় জালিয়াতির ঘটনা শনাক্ত করা, এ ধরনের ঘটনার আগাম পূর্বাভাস পাওয়ার কৌশল, যে কোনো ঘটনার সূত্র ধওে বড় ধরনের জালিয়াতি ঘটনা আবিষ্কার করার ক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ উদ্যোগকে দেশের অর্থনীতিবিদরাও শুভ বলে মনে করছেন। তাঁদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এধরনের বিশেষ দল সততা, দক্ষতা ও অশুভ প্রভাবের বাইরে থাকতে পারলে দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য তা সুফল বয়ে আনবে। কারণ ভিজিলেন্স টিমের অব্যাহত সক্রিয়তায় অনেকেই অপরাধ করা থেকে বিরত থাকবে। তাছাড়া কমিটির অডিট অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেয়অ হলেও কমে আসবে ক্ষতির পরিমাণ।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নও এসকে সুর সাংবাদিকদের জানান, দেশের ব্যাংকগুলোর অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধেই গঠন করা হচ্ছে বিশেষ দল। ফেয়ার নিউজ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়