সাবেক প্রেসিডেন্ট, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাজনীতির মাঠে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না। তিনি আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এককভাবে অংশ নেবে বলে বার বার বললেও রয়েছেন মামলা আতঙ্কে। এরশাদের নামে এখনও আদালতে ঝুলে আছে ৩টি মামলা। এর মধ্যে দুটি মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তও হয়েছে। এসব মামলা পুরোপুরি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত এরশাদ মুক্ত হতে পারছেন না এবং কঠিন কোন সিদ্ধান্তও গ্রহণ করতে পারছেন না। আশঙ্কা করছেন এ মুহূর্তে মহাজোট ছেড়ে এলে প্রক্রিয়াধীন থাকা মামলা দুটি প্রত্যাহার না-ও হতে পারে। বিচারাধীন মামলাটিতে রয়েছে সাজা পাওয়ার আশঙ্কা। এমনকি স্থগিতকৃত মামলাও পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। জেলেও যেতে পারেন এরশাদ।অবশ্য ইতোমধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্টে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ প্রায় ৪০ মামলার নিষ্পত্তি করেছে। তার সামনে আর মাত্র ৩টি মামলা। ৩টি মামলা অতিক্রম করলেই তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুক্ত হবেন। ইতোধ্যেই দুটি মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অন্যটির ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। একটি মামলার কাগজপত্র আদালতে এখনও আসেনি বলে জানা যায়। জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক কারণে মাঝপথে আটকে আছে। একই কারণে প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে না অপর বিষয়টি নিয়েও। আর এ কারণেই এ মুহূর্তে মহাজোট ছেড়ে আসার ঘোষণা দিতে পারছেন না এরশাদ। যদিও তিনি বারবার বলছেন, আগামীতে জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করবে। তবে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা চায়, দেরী না করে জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসুক। এরশাদ ১৯৯০ সালে প্রবল গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়ার পর বিশেষ ক্ষমতা বলে গ্রেপ্তার হয়ে ৬ বছরের অধিক সময় জেল খাটেন। ১৯৯৭ সালের ৯ই জানুয়ারি তিনি জামিনে মুক্তি পান। জেলে থাকাকালীন সময়ে তার বিরুদ্ধে দেয়া হয় ৪৩টি মামলা। সব মামলা হয় ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে। আবার ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সময়ে বিএনপি সরকারের আমলেই অধিকাংশ মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ওই আমলে কয়েকটি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তিও হয়। এরশাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত উল্লেখযোগ্য মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্বর্ণ মামলা, টিএন্ডটি মামলা, থ্রি স্টার পোল্ট্রি ফার্ম, আয়কর, জাহাজ ক্রয়, রোড ইমালশান, রাজউকের প্লট বরাদ্দ, হরিপুরে তেল অনুসন্ধান, জনতা টাওয়ার, জাপানি বোট ক্রয়, মঞ্জুর হত্যা, রাডার ক্রয় প্রভৃতি। মহাজোট সরকারের আমলে মাত্র একটি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়। এরশাদ এখন প্রায় ৪০টি মামলা থেকে মুক্ত। এর মধ্যে কোন কোন মামলায় বেকসুর খালাসও পেয়েছেন। কোন মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের রিটের কারণে স্থগিত রয়েছে ২-১টি মামলা। ২টি মামলায় সাজা ভোগ করেছেন। এখন রয়েছে ৩টি মামলা।অবৈধভাবে দেশের বাইরে থেকে স্বর্ণ আনার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার বেকসুর খালাস পান সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে দেশের ৮৯টি উপজেলায় এনালগ পদ্ধতি বাতিল করে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে দায়ের করা হয়েছিল টিএন্ডটি মামলা। এ মামলাটিতেও এরশাদ বেকসুর খালাস পান। বেকসুর খালাশ পাওয়া অন্য মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে থ্রি স্টার পোল্ট্রি ফার্ম মামলা, আয়কর মামলা, রোড ইমালশান মামলা, রাজউকের প্লট বরাদ্দ মামলা প্রভৃতি। শিল্প ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল থ্রি স্টার পোল্ট্রি ফার্ম। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঋণের সুদ মওকুফ করে দেয়া হয়েছে। নিজ সম্পত্তির ওপর কর দেয়ার পর করের টাকা ফিরিয়ে নেয়ার অভিযোগে দায়ের করা হয়েছিল আয়কর মামলা। রাস্তা নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ কাজের সরঞ্জামাদি হিসেবে কেনা হয়েছিল মোটা অংকের রোড ইমালশান। কেনা-কাটার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলাটি হয়েছিল। এ মামলাটি রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জনতা টাওয়ার এবং জাপানি বোট ক্রয় মামলায় এরশাদ ৩ বছর করে সাজা খেটেছেন। এ মামলাটি চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করা হয় গত বিএনপি সরকারের আমলে। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মামলাটি চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়। এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকলীন রাজউকের ৩৯টি প্লট দেশের কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং প্রভাব খাটানোর অভিযোগ আনা হয়। জাহাজ ক্রয় সংক্রান্ত মামলাটিতে এরশাদ চার্জ শুনানির সময় অব্যাহতি পান। এছাড়াও অব্যাহতি পান হরিপুরে তেল অনুসন্ধান সংক্রান্ত মামলা থেকেও। জনৈক মরিয়ম মেরীর কাছে লন্ডনে মোটা অংকের টাকা পাচারের অভিযোগে ১৯৯৫ সালে এরশাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলা করা হয়। গত বছর ফাইনাল রিপোর্টের মাধ্যমে এরশাদকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। মামলাটির তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।বন্যার সময় দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে জাপান থেকে বেশকিছু বোট কেনা হয়। কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ এনে মামলাটি করা হয়েছিল। এখনও নিষ্পত্তি হয়নি মঞ্জুর হত্যা মামলা এবং রাডার ক্রয় মামলা। এ মামলা দুটি ছাড়াও রোড ইমালশন এবং স্থগিতকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে জাতীয় পার্টি গত বছর বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করেছে। স্মারকলিপি দেয়া হয় সারাদেশের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে। মিছিল-সমাবেশও করে পার্টির নেতা-কর্মীরা। গত বছরই রাডার ক্রয় এবং রোড ইমালশন মামলা দুটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিবেচনায় আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যা সংশ্লিষ্ট আদালতে না আসায় রাডার ক্রয় মামলাটি এখনও বিচারাধীন। রাডার ক্রয় মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ফ্রান্স থেকে রাডার না কিনে নিয়ম ও বিধিবহির্ভূত এবং অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আমেরিকা থেকে রাডার কেনা হয়।বিচারাধীন রয়েছে মঞ্জুর হত্যা মামলা। এ মামলাটি করা হয় ১৯৯৫ সালে। মামলার বিবরণ অনুযায়ী- ১৯৮১ সালে মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যা করা হয়। ১৬ বছর ধরে এর বিচারকাজ চলছে। এ মুহূর্তে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য চলছে। দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, এরশাদ আমলে নয় বছরে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে তার জন্যে তাকে রাষ্ট্রীয় উপাধিতে ভূসিত করা উচিত ছিল। তা না করে তার বিরুদ্ধে দেয়া হলো একের পর এ মামলা। বিষয়টি খুবই পরিতাপের। এরশাদের জন্য এটা দুর্ভাগ্যজনকও বটে। প্রত্যাশা করি দেশের আর কোন রাজনীতিবিদ যেন এরশাদের মতো প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কারাগারে জীবন না কাটান।সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন বলে বলছেন দলীয় নেতারা। তারা বলেন, এরশাদের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় ধস নামানো এবং তাকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব মামলা দেয়া হয়েছিল। খবর:-ফেয়ার নিউজ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়