আজ বাইশে শ্রাবণ। বাংলা সাহিত্য ও কাব্যগীতির শ্রেষ্ঠ স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭১তম প্রয়াণ দিবস।কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির শ্যামল আঙ্গিনায় জন্মেছিলেন তিনি। আজ থেকে ৭১ বছর আগে সেই শ্যামল প্রাঙ্গণেই শ্রাবণের বর্ষণসিক্ত পরিবেশে ১৯৪১ সালের এই দিনে চিরবিদায় নেন।প্রকৃতিকে কাঁদিয়ে তাঁর এমন প্রস্থানে তাই শোকার্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, সেদিন শ্রদ্ধা নিবেদন করে লিখেছিলেন- �দুপুরের রবি পড়িয়াছে ঢলে অস্তপারে কোলে/ বাংলার কবি শ্যাম বাংলার হৃদয়ের ছবি তুমি চলে যাবে বলে/ শ্রাবণের মেঘ ছুটে এলো দলে দলে।�আশি বছরের জীবন সাধনায় তিনি তাঁর জন্ম এবং মৃত্যুকে একাকার করে তুলেছিলেন অজস্র অমরতার শ্বাশত বার্তায়। তাই জন্মদিন নিয়ে তিনি লিখেছিলেন- �ওই মহামানব আসে/ দিকে দিকে রোমাঞ্চ/ মর্তধুলির ঘাসে ঘাসে...�।সেই তিনিই আবার জীবন সায়াহ্নে লিখলেন- �মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক আমি তোমাদেরই লোক।� আরও বললেন- �আমার এ জন্মদিন মাঝে আমি হারা/ আমি চাহি বন্ধুজন যারা/ তাহাদের হাতের পরশে/ মর্ত্যরে অন্তিমপ্রীতি রসে/ নিয়ে যাবো জীবনের চরম প্রসাদ/নিয়ে যাবো মানুষের শেষ আশীর্বাদ...�।মানুষের শেষ আশীর্বাদ নিয়েই এই মহান মানবতাবাদী দার্শনিক- কবি অনিঃশেষ অনির্বাণ শিখার মতই জ্বলছেন আজও বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে।বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনেক কিছুরই প্রথম তিনি। ছোটগল্পের জনক, এমনকি বাংলা গদ্যের আধুনিকায়নের পথিকৃৎও তিনি। নোবেল জয় করে একটি প্রদেশিক (তৎকালীন) ভাষাকে বিশ্ব সাহিত্যে স্থান করে দিয়েছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত চিঠিও যে কী অসাধারণ ললিল সাহিত্য আর দার্শনিকতার দৃষ্টান্ত হতে পারে, তাঁর �ছিন্নপত্র� সৃষ্টির আগে তার তো কোন নজীর ছিল না। গল্পে, উপন্যাসে, কবিতায়, প্রবন্ধে, নতুন সুরে ও বিচিত্র গানের বাণীতে, অসাধারণ সব দার্শনিক চিন্তাসমৃদ্ধ প্রবন্ধে, সমাজ ও রাষ্ট্রনীতিসংলগ্ন গভীর জীবনবাদী চিন্তাজাগানিয়া অজস্র নিবন্ধে, এমনকি চিত্রকলায়ও- সবত্রই রবীন্দ্রনাথ চির নতুন।রবীন্দ্রনাথই আবার গভীর জীবন তৃষ্ণায় লিখেছেন� �মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে/ মানবের মাঝে আমি বাঁচিবার চাই। এই সূর্যকরে এই পুিত কাননে/ জীবন হৃদয় মাঝে যদি স্থান পাই।�রবীন্দ্রনাথ অবশ্য জন্ম-মৃত্যুর মাঝে তফাত দেখেছেন খুব সামান্যই। সৃষ্টিই যে এই নশ্বর জীবনকে অবিনশ্বরতা দেয়, সে কথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন বলেই তিনি অমন দৃঢ়তায় বলতে পেরেছেন- মৃত্যু দিয়ে যে প্রাণের/মূল্য দিতে হয়/ সে প্রাণ অমৃতলোকে/ মৃত্যুকে করে জয়।�গত বছর ছিলো রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ এবং ভারতে যৌথভাবে পালিত হয় কবির জন্মদিন। তাঁর প্রয়ান দিবস উপলক্ষেও বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমী আগামীকাল বিকেল ৩টায় একাডেমীর সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেবেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। এ ছাড়াও রবীন্দ্রনার্থে নাটকে তিন নারী শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করবেন পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমীর সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। খবর:-ফেয়ার নিউজ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়