Friday, August 3

মাহে রমাজানঃ খোদাভীতি অর্জনের শ্রেষ্ঠ সময়

মুসলিম আকেল-বালেগ নর-নারীগণ সুবহে সাদেক হতে সূর্যাসত্ম পর্যমত্ম ইবাদতের নিয়্যতে পানাহার এবং যৌন সঙ্গম থেকে বিরত থাকাই রোযা। নারীদের বেলায় এ সময় হায়েজ ও নেফাস থেকে পবিত্র থাকা পূর্বশর্ত। (আলমগীরী) রমযানের রোযা রাখা মুসলমান বালেগ, বিবেকবান ও সুস্থ নর এবং একই ধরনের হায়েজ ও নেফাস থেকে মুক্ত নারীদের উপর ফরযে আইন। অস্বীকার বা ঠাট্টা করলে কাফির হবে আর বিনা অজুহাতে অবহেলা বশত: আদায় না করলে কবীরা গুণাহগার ও ফাসিক্ব হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতাব ও আলমগীরী) রমযানের একমাস রোযা পালন করা ফরয। হাদীস শরীফে বর্ণিত যে, হুজুর সালস্নালস্নাহু আলায়হি ওয়াসালস্নাম এরশাদ করেছেন, ‘মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়, ত্রিশ দিনেও হয় বিধায় চাঁদ দেখে রোযা শুরম্ন কর এবং চাঁদ দেখেই (রোযা) রাখা বন্ধ কর। যদি ঊনত্রিশে রমজান চাঁদ দেখা না যায় তবে ত্রিশদিন পূর্ণ করবে।’ (খাযাইনুল ইরফান) রোযার নিয়্যতঃ রোযার জন্য নিয়্যত করাও অত্যাবশ্যকীয়। প্রত্যেক রোযার জন্য অমত্মরে ইচ্ছা থাকার মাধ্যমে নিয়্যতের শর্ত পূরণ হবে। তবে তা মুখে উচ্চারণ করা মুসত্মাহাব। এ নিয়্যত পূর্বদিনের সূর্যাসেত্মর পর হতে রোযার দিনের দুপুরের আগ পর্যমত্ম করা যাবে। এর আগে বা পরে করলে রোযা হবে না। রোযার নিয়্যতে সাহ্রী খাওয়াও নিয়্যত হিসেবে গণ্য হবে। সোবহে সাদিকের পূর্বে নিয়্যত করলে বলবেন- ‘নাওয়াইতু আন আসূমা গাদাম মিন শাহরি রামাদ্বা-নাল মুবারাকি ফারদ্বাল্ লাকা ইয়া আলস্নাহু! ফাতাক্বাববাল মিন্নী ইন্নাকা আনতাস সামী’উল আলীম।’ অর্থাৎ ‘আমি আলস্নাহর সমেত্মাষ্টির জন্য আগামীকাল রমযানের ফরয রোযা রাখার নিয়্যত করলাম।’ আর ফজরের পর নিয়্যত করলে বলবেন-‘নাওয়াইতুআন আসূমা হাযাল ইয়াওমা লিলস্নাহি তায়ালা মিন ফারদ্বি রমাদ্বানা।’ অর্থাৎ ‘আলস্নাহর সমেত্মাষ্টির জন্য আমি আজকের রমজানের ফরয রোযা রাখার নিয়্যত করলাম। রোযার নিয়্যত রাতে বা ফজরের আগে করাই মুসত্মাহাব। রোযার নিয়্যত কার্যকর হয় সুবহে সাদেক হতে। অতএব, কারো দিনের বেলার (মধ্যাহ্নের পূর্ব পর্যনমত্ম) নিয়্যত ঐ সময় শুদ্ধ হতে পারে যদি নিয়্যতকারী সুবহে সাদিক হতে রোযা ভঙ্গের কোন কাজ না করে। (রদ্দুল মুহতার) সাহরী খাওয়ার সময় বা সুবহে সাদেক্বের পূর্বে যদি মনস্থ করে যে, সকালে রোযা রাখবে না, তখন নতুন নিয়্যত না করলে রোযা হবে না। যদিও সে সারাদিন পানাহার ও যৌন সঙ্গম পরিহার করে। (দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার) সাহরী খাওয়া রোযার নিয়্যত রূপে গণ্য হয়। কিন্তু সে সময় যদি এই ইচ্ছা থাকে যে, সকালে রোযা রাখবেনা তাহলে সাহরী খাওয়া নিয়্যত বলে গণ্য হবে না। (জাওহারাহ ও দুররে মুখতার) মুসাফির ও পীড়িত লোক ব্যতীত অন্য কেউ রমযানের রোযার সময় যদি নফল কিংবা ওয়াজিব কিংবা পূর্ববর্তী কোন কাযার নিয়্যত কর তবুও তার রমজানের রোযাই আদায় হবে। পÿামত্মরে মুসাফির ও পীড়িত লোক যদি রমযান ব্যতীত অন্য কোন রোযার নিয়্যত করে তবে যা নিয়্যত করে তাই আদায় হবে- রমযানের নয়। (তানভীরম্নল আবসার) যদি কোন নারী হায়েয বা নেফাস অবস্থায় রাতে রোযার নিয়্যত করে থাকে এবং সুবহে সাদেকের পূর্বেই পবিত্র হয়ে যায়, তবে তার রোযা শুদ্ধ হবে। (জাওহারাহ) রমজানের রোযা যাদের জন্য পরে আদায়ের অবকাশ রয়েছে- সফর, গর্ভধারণ, সমত্মানকে দুগ্ধ পান করানো, পীড়া, বার্ধক্য, শারীরিক ও মানসিক কোন প্রকার ÿয়ÿতির আশংকা এবং জেহাদ এসব অজুহাতে এ মাসে রোযা না রেখে তা ক্বাযা করলে গুনাহগার হবে না। (আলমগীরী) বিনা ওযরে এ মাসে রোযা না রাখা বড় গুনাহ। পীড়িত লোক নিজ অনুমান বশত: রোযা ছেড়ে দিতে পারবে না। যতÿণ পর্যমত্ম সে ব্যক্তি কোন দ্বীনদার চিকিৎসকের মতামত কিংবা নিজের বাসত্মব অভিজ্ঞতা অথবা কোন প্রমাণ দ্বারা দৃঢ় ধারণায় উপনীত না হয় যে, রোযার কারণে তার রোগ বৃদ্ধি পাবে। অন্যথায় তাকে রোযার ক্বাযা ও কাফ্ফারা উভয়ই আদায় করতে হবে। কোন লোক সুস্থ কিন্তু দ্বীনদার চিকিৎসক যদি রোযার কারণে পীড়িত হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেন তবে সে ব্যক্তিও পীড়িতদের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। (খাযাইনুল ইরফান ও দূররে মুখতার) গর্ভবতী বা সত্মন্যদাত্রী রমণী যদি রোযার কারণে স্বীয় কিংবা দুগ্ধ পোষ্য সমত্মানের জীবনহানি অথবা অসুস্থতার আশংকা বোধ করে তবে তার জন্য পরবর্তীতে রোযা রাখার অবকাশ রয়েছে। এমনকি এ ÿÿত্রে পেশাদার সত্মন্যদানকারিনীর জন্যও একই হুকুম। (দূরবে মুখতার ও খাযাইনুল ইরফান) বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা হেতু রোযা রাখতে অসমর্থ হলে তার জন্য ক্বাযা করার অনুমতি রয়েছে। আর যদি সে ব্যক্তির সুস্থতা ও সামর্থ্য ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকে তবে সে ÿÿত্রে সে ব্যক্তি প্রতি রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে দুই বেলা পেট ভরে আহার করাবে, অথবা অর্ধ সা’ (২ কেজি ৫০ গ্রাম) গম বা গমের আটা কিংবা তার দ্বিগুণ যব কিংবা যবের সমমূল্য ফিদয়া হিসেবে প্রদান করবে। যদি ফিদ্য়া প্রদানের পর পুনরায় রোযা রাখার মত সামর্থ্য ফিরে আসে তবে তাকে তখন রোযার ক্বাযাও আদায় করতে হবে। মরণোন্মুখ বৃদ্ধ বা শায়খে ফানী (যার সুস্থতা ও সামর্থ্য ফিরে পাওয়ার আশা নেই) রোযা রাখতে অসমর্থ হলে বা ফিদয়া প্রদানেও যদি সÿম না হয় তবে সে যেন আলস্নাহর কাছে ÿমা প্রার্থনা করে এবং নিজের অÿমতার জন্য মার্জনা চাইতে থাকে। (খাযাইনুল ইরফান ও রদ্দুল মুখতার) হায়েয ও নেফাস অবস্থায় রমনীদের জন্য রোযা রাখা নিষেধ। তারা পরে কাযা করবে। (হিন্দিয়া) কোন নারীর হায়েয ও নিফাসজনিত রক্তস্রাব শুরম্ন হওয়া মাত্র তার রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়। অতএব এ থেকে পবিত্র হওয়ার পর রোযা পালন করবে। কোন রমণীর যদি রাতেই হায়েয বন্ধ হয় তবে সুবহে সাদিক থেকে সে রোযা পালন করবে। কোন রমণীর দশদিনের ভেতরে হায়েয বন্ধ হলে তার জন্য গোসলের সময়ও হায়যের মধ্যে অমত্মর্ভুক্ত। তাই রাতের এমন সময় যদি সে পবিত্র হয় যে, গোসল সমাপন করতে ফজর হয়ে যায় তবে তার জন্য সেদিনের রোযা শুদ্ধ হবে না। এমনভাবে ভোর হওয়ার পরে রক্ত বন্ধ হলেও তার জন্য ওই দিনের রোযা শুদ্ধ হবে না। ÿুধা ও পিপাসা যদি এতই তীব্র ও প্রকট আকার ধারণ করে যে, রোযা ভঙ্গ না করলে মৃত্যুর আশংকা বা মানসিক ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার সংশয় হয় তবে রোযা ভঙ্গ করতে পারে। (&আলমগীরী) সাপ বা বিষাক্ত কোন কিছুর দংশনে প্রাণহানির আশংকা দেখা দিলেও রোযা ভঙ্গ করতে পারে। (রদ্দুল মুহতার) মুসাফিরের জন্য সফরকালে রোযা রাখা নিজের জন্য এবং সফর সঙ্গীদের জন্য কোন প্রকার বিঘ্নের কারণ না হলে রোযা পালন করা উত্তম। বিঘ্ন বা অসুবিধা হলে রোযা না রাখাই উত্তম। পরবর্তীতে তা কাযা করবে। (দুরবে মুখতার) রোযা না রাখার অবকাশ প্রাপ্তরা অর্থাৎ রোযার ক্বাযা পরবর্তী বৎসরের রমযানের আগেই ক্বাযা আদায় করার চেষ্টা করবে। কেননা হাদীস শরীফে এজন্য জোর তাকীদ দিয়ে বলা হয়েছে যে, পূর্ববর্তী রমযানের রোযা আদায় না করলে তার রোযা কবুলের অযোগ্য হয়ে যায়। (দুররে মুখতার) যদি অবকাশ প্রাপ্তগণ তাদের অবকাশকালীন সময়ে মৃত্যুবরণ করে এবং ক্বাযা আদায়ের সময়ই না পায় তাহলে এর বিনিময় স্বরূপ ফিদিয়া দেয়া ওয়াজিব নয়। এতদসত্বেও তারা অসিয়ত করলে তাদের সম্পদের এক তৃতীয়াংশ হতে এ ওসীয়ত পূর্ণ করা হবে। পÿামত্মরে যদি অবকাশ এরপর মৃত্যুর পূর্বে সময় পাওয়া যায় যাতে সে ক্বাযা করতে পারত তাহলে তার জন্য মৃত্যুকালে এ ফিদিয়া দান করার ওসীয়ত করা ওয়াজিব। মৃত ব্যক্তি ওসীয়ত না করলেও ওয়ারিশগণ তাদের পÿ থেকে তার ফিদিয়া আদায় করলে তা শুদ্ধ হবে: যেসব কারণে রোযা ভঙ্গ হয় নাঃ ভুল বশত: পানাহার ও বা যৌন সম্ভোগ সংঘটিত হলে। কিন্তু রোযার কথা স্মরণ হওয়া মাত্রই সেগুলো থেকে বিরত হতে হবে। যদি স্মরণ হওয়া মাত্র বিরত না হয়ে সে কাজ রত থাকে তবে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। (দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার) কোন রোযাদারকে ভুলবশত: পানাহার করতে দেখলে স্মরণ করিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। কিন্তু যখন উক্ত রোযাদার অতিশয় দুর্বল হয় এবং স্মরণ করানোর ফলে সে ব্যক্তি পানাহার বন্ধ করবে এবং রোযা রাখাও তার জন্য অসাধ্য হবে তবে স্মরণ করানো হতে বিরত থাকাই উত্তম। (রদ্দুল মুহতার) মাছি বা এ জাতীয় প্রাণী, ধোঁয়া ও ধুলো-বালি গলায় চলে গেলে তাতে রোযা নষ্ট হবে না। যদি উড়মত্ম আটার কণাও অনিচ্ছাকৃতভাবে গলায় ঢুকে যায় তবুও রোযা নষ্ট হবে না। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে গিললে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। রোযা রেখে সুরমা বা তেল লাগানো অথবা আতর ব্যবহার করতে অসুবিধা নেই। চোখে সুরমা ব্যবহারের ফলে যদি থুথুতে তার রঙ দেখা যায় এবং কন্ঠনালীতে তার স্বাদও অনুভব হয় তবুও রোযার কোন ÿতি হবে না। অনিচ্ছাকৃতভাবে গলায় ধোঁয়া প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে না। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে নাকে বা মুখে ধোঁয়া টেনে নিলে রোযা ভঙ্গ হবে না। (জাওহারাহ ও দুররে মুখতার) রোযা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কিংবা স্বপ্নে কোন পানাহার করলে রোযার কোন ÿতি হবে না। রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করলে, এতে স্বামীর বীর্যপাত না হলে রোযা ভঙ্গ হবে না। স্ত্রীর লজ্জাস্থানের দিকে তাকালো কিন্তু স্পর্শ করলো না কিংবা বারবার সেদিকে দৃষ্টিপাত করল এরই ফলে অথবা দীর্ঘÿণ যৌনকল্পনার ফলশ্রম্নতিতে আপনা-আপনি বীর্যপাত হলো, সেÿÿত্রে রোযা ভঙ্গ হবে না। (জাওহারাহ ও দুররে মুখতার) কাঁচা বা শুকনা মিসওয়াক দ্বারা দাঁত মাজা দুষণীয় নয়। যদি মিসওয়াকের তেতো রস বা স্বাদ মুখে অনুভূত হয় তবুও রোযার কোনরূপ ÿতি হবে না। গোসল করার সময় পানির শীতলতা শরীরে অনুভূত হলেও রোযা ভঙ্গ হবে না। অনুরূপ কুলিস্ন করে মুখ থেকে পানি ফেলে দিল কিন্তু এরপর যেটুকু আর্দ্রতা রইল তা থুথুর সাথে গিলে ফেললেও রোযার ÿতি হবে না। দাঁতে ঔষধ চূর্ণ করতে গিয়ে গলায় তার স্বাদ অনুভূত হল অথবা হাঁড় চোষণ পূর্বক থুথু গিলল কিন্তু হাঁড়ের কোন অংশ কন্ঠনালীতে প্রবেশ করল না, কানে পানি ঢুকল বা খড়কুটো দিয়ে কান পরিস্কার করতে গিয়ে এবং গায়ে লেগে আসা কানের ময়লা রেখেই বার কয়েকবার তা কানে প্রবেশ করালো, দাঁতের ফাঁকে বা মুখে অতি ÿুদ্র কোন দ্রব্য নিজের অজামেত্ম থেকে গেল যা থুথুর সাথে বেরিযে আসার মত তা বের হয়ে গেল অথবা দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে তা কন্ঠনালী পর্যমত্ম পৌঁছল এবং এর নীচে গেল না, এসব অবস্থায় রোযা নষ্ট হবে না। (দূররে মুখতার ও ফতহুল ক্বাদীর) ০ কথা বলতে গিয়ে থুথুতে মুখ ভরে উঠলো সেগুলো গিলে ফেলল অথবা মুখের গড়িয়ে পড়া লালা মুখ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগেই টান গিলে ফেলল, নাকের শেস্নষা বা পানি অথবা গলার কফ গিলে ফেলল, এ সবের কারণেও রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে এসব থেকে সতর্ক থাকাই শ্রেয়। (আলমগীরী, দূররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার) ০ জিহবাদ্বারা লবণের স্বাদ গ্রহণ করে থুথু ফেলে দিল এবং মুখ পরিস্কার করে নিল, এ অবস্থায় রোযা ভঙ্গ হবে না। ০ তিল বা তিল পরিমাণ কোন বসত্মু চিবিয়ে থুথুর সাথে গিলে ফেলল এবং তাতে যদি এর স্বাদ অনুভূত হয় তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে অন্যথায় রোযা ঠিক থাকবে। (ফতহুল কাদীর) ০ রোযা অবস্থায় গস্নুকোজ জাতীয় স্যালাইন বা ইনজেকশন গ্রহণ করলে তাতে রোযা ভঙ্গ হবে। যেসব কারণে রোযা ভঙ্গ হবে এবং ক্বাযা আদায় করতে হবেঃ ০ সুবহে সাদিক হয়নি ভেবে পানাহার বা স্ত্রী সম্ভোগ করেছে কিন্তু পরে জানতে পারলো, তখন সুবহে সাদিক হয়েছিল এ অবস্থায় রোযা রাখবে, তবে ঐ রোযার ক্বাযা আদায় করতে হবে। ০ সূর্যাসত্ম হয়েছে মনে করে সময়ের পূর্বে ইফতার করে ফেললে। ০ সুবহে সাদেকের পূর্বে পানাহার বা স্ত্রী সম্ভোগে রত কিন্তু সবুহে সাদেক হওয়া মাত্রই মুখের খাদ্য বা পানীয় ফেলে দিলনা বা স্ত্রী সম্ভোগ হতে আলাদা হলনা এ অবস্থায় রোযার ক্বাযা আদায় করতে হবে। ০ ভুলবশত: স্ত্রী সম্ভোগ বা পানাহার করল এবং এতে রোযা বিনষ্ট হয়েছে মনে করে স্বেচ্ছায় পানাহার করলো এতেও ক্বাযা আদায় করতে হবে। ০ নাকে নস্যি টানলে, কানে বা নাকে তেল বা ঔষধ দেয়ায় তা ভিতরে ঢুকলে, মলদ্বার বা স্ত্রী যৌনাঙ্গ দিয়ে পানি, ঔষধ বা তেল প্রবেশ করালে রোযা ভঙ্গ হবে। ০ রোযাদারের দাঁত উপড়ানোর পর রক্ত কন্ঠনালীর নীচে পৌঁছালে রোযার ক্বাযা আদায় করতে হবে। ০ ইচ্ছাকৃতভাবে মুখভর্তি বমি করলে রোযা নষ্ট হয়। অনুরূপ অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হওয়ার পর সামান্য পরিমাণও গিলে ফেললে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। ০ কুলি বা গোসলের সময় রোযার কথা স্মরণ থাকা সত্বেও কোনভাবে পানি নাক-কান দিয়ে কন্ঠনালী কিংবা মগজে প্রবেশ করে তবে রোযার ক্বাযা আদায় করতে হবে। ০ সাহরীর পর পান মুখে ঘুমিয়ে পড়ে এবং এ অবস্থায় ফজর হয়ে গেলে রোযার ক্বাযা আদায় করতে হবে। ০ চিনি বা এ জাতীয় খাদ্য দ্রব্য যা মুখে দিলে গলে যায়, যদি মুখে রাখে এবং থুথু গিলে ফেললে রোযার ক্বাযা আদায় করতে হবে। ০ দাঁতের ফাঁকে চানা পরিমাণ বা তার চাইতেও বড় কোন খাদ্যবসত্মু লেগেছিল, তা খেয়ে ফেললে অথবা এর চাইতে ছোট কণা মুখ হতে বাইরে এনে আবার তা খেয়ে ফেললে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। ০ অপরের থুথু খেলেও রোযা নষ্ট হবে। অনুরূপ নিজের থুথু হাতে নিয়ে পুনরায় তা গিলে ফেললে রোযার ক্বাযা আদায় করতে হবে। রোযার ক্বাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হওয়ার কারণসমূহঃ ০ ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা অবস্থায় পানাহার বা যৌনমিলন সংগঠিত করলে তার উপর ক্বাযা ও কাফফারা উভয়ই আদায় বাধ্যতামূলক। ০ এমনিভাবে রোযা অবস্থায় বিড়ি, সিগারেট, গাঁজা বা নেশা জাতীয় দ্রব্য ব্যবহারের কারণে রোযার ক্বাযা ও কাফফারা দেয়া আবশ্যক। ০ রোযা অবস্থায় কাঁচা মাংস খেলে ক্বাযা ও কাফ্ফারা দিতে হবে। এমনকি যদি তা মৃতের মাংসও হয়। ০ যে ব্যক্তির মাটি খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে সে যদি রোযা অবস্থায় মাটি খায় তবে ক্বাযা কাফফারা দিতে হবে কিন্তু অভ্যাস বশত: না হলে ক্বাযা আদায় করলে চলবে। (জাওহারা ও আলমগীরী) ০ ঘুমমত্ম রোযাদার স্ত্রীর সঙ্গে রোযাদার স্বামী রোযা অবস্থায় যৌন মিলন করলে উভয়ের রোযাই নষ্ট হবে কিন্তু ক্বাযা ও কাফফারা বাধ্যতামূলক হবে কেবল স্বামীর উপর, স্ত্রী শুধু ক্বাযা আদায় করবে। রোযার কাফ্ফারাঃ এক নাগাড়ে ৬০টি রোযা রাখা। শারীরিক সামর্থ্য না থাকলে ষাট জন মিসকীন বা অভাবীকে দুই বেলা পেট ভরে আহার করানো বা তৎপরিবর্তে সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। যেসব কারণে রোযা মাকরূহ হয়ঃ ০ রোযা অবস্থায় বিনা প্রয়োজনে কোন কিছুর স্বাদ পরীÿা করা বা কোন কিছু চিবানো মাকরূহ। ০ মিথ্যা বলা, গীবত (অন্যের দোষ চর্চা), চোগলখোরী, অশস্নীল বাক্য উচ্চারণ করা, গালি দেয়া, বেহুদা কথা বলা, কাউকে কষ্ট দেয়া এমনিতেই হারাম ও নাজায়েয। রোযাদারের জন্য এ সমসত্ম কাজ কোন মতেই উচিত নয়। এসব কাজ রোযাকে মাকরূহ করে ফেলে। ০ রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন দেয়া, গলাগলি করা বা শরীর স্পর্শ করা মাকরূহ যদি এর ফলে বীর্যপাত কিংবা যৌন মিলনের আশঙ্কা হয়। আর স্ত্রীর ওষ্ঠ চোষা রোযাদারের জন্য সর্বাবস্থায় মাকরূহ। (রদ্দুল মুহতার) ০ পবিত্রতা হাসিলে অধিক পরিমাণ পানি ব্যবহার করা কিংবা অধিকমাত্রায় কুলিস্ন করা ও নাকে বেশী করে পানি দোয় মাকরূহ। ওযূ ও গোলস ব্যতীত অন্য সময় অনাবশ্যক কুলিস্ন করা বা নাকে পানি দেয়াও মাকরূহ। ০ পানি বায়ু ত্যাগ করা, মুখে থুথু জমা করে গিলে ফেলা প্রভৃতি কাজ রোযাকে মাকরূহ করে ফেলে। (আলগীরী) দৈনিক সিলেটের ডাক: মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়