Wednesday, August 1

কানাইঘাটে সেটেলমেন্ট অফিসে ঘুষ বাণিজ্য

উপজেলার বিভিন্ন মৌজার চলমান ভূমি জরিপের ৩১ ধারায় নিয়োজিত কানাইঘাট সেটেলম্যান্ট অফিসের আপীল অফিসার, পেশকার ও জারীকারকরা বেপরোয়া অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ভূমি মামলার পক্ষে-বিপক্ষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। টাকা ছাড়া ভূমি জরিপের ৩১ ধারার মামলা নিষ্পত্তি করা হয় না এবং জমির প্রকৃত মালিকের নামে রেকর্ড হয়না বলে ভূমি মালিকরা জানিয়েছেন। ভূমি জরিপে নিয়োজিত জরিপ অফিসারদের দাবীকৃত টাকা না দিলে ৩১ ধারা রেকর্ডের ঝামেলা হবে বলে জমির মালিকরা বাধ্য হয়ে টাকা দিচ্ছেন। সরজমিনে সেটেলমেন্ট অফিসে গিয়ে দেখা গেছে , ৩১ ধারা শুনানী চলাকালে প্রকাশ্যে টাকার ছড়াছড়ি চলছে। এজলাসে বসে এবং অফিসের বাহিরে কখনও পেশকার ও জারিকারক ও দালালদের মাধ্যমে অবৈধ টাকার লেনদেন সেরে নিচ্ছেন অফিসাররা। স্থানীয় কয়েকজন ভূয়া নামধারী মোহরী ও সেটেলমেন্ট কেন্দ্রীক দালালরা এর সাথে প্রকাশ্যে জড়িত রয়েছেন। শুনানীকালে জরিপ অফিসাররা ভূমি মালিকদের প্রমাণাদি পর্যালোচনা না করে টাকা অংক বিবেচনা করে রায় দেন। এক্ষেত্রে প্রকৃত জমির মালিকগণ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একপর্যায়ে হারাতে হচ্ছে তাদের ভিটেমাটি। অনেক সময় একাধিক পক্ষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিরোধপূর্ণ জমির শুনানী শেষে ফাইল গোপন রেখে কার পক্ষে শুনানী গেছে তা না জানিয়ে উভয় পক্ষকে টাকার অঙ্ক বেঁধে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে মামলা নিষ্পত্তি হলেও অনেক ভূমি মালিকরা মাসের পর মাস ধরণা দিয়েও তারা তাদের কাঙ্খিত প্রাথমিক ফর্সা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে প্রবাসী অধ্যূষিত এ জনপদে দিন দিন জমির মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভূমির দখল মালিকানা নিয়ে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে। থানায় এ সংক্রান্ত শতকরা ৭০ ভাগ মামলা দায়ের হয়। এ সুযোগে প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা বিবেচনা করে ভূমি জরিপে নিয়োজিত মাঠ তদন্তকারী কর্মকর্তারা এক পক্ষের দখলীয় ভূমির অন্যপক্ষের দখল আছে বলে রেকর্ড করার জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে সুপারিশ করছে। এতে করে উভয় পক্ষের মধ্যে স্থায়ী বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে। ভূমি জরিপে নিয়োজিত অফিসারদের মধ্যে কানাইঘাট পৌরসভার মহেষপুর সহ বিভিন্ন গ্রামের আপীল অফিসার আশরাফুল করীম, দুর্লভপুর সহ বিভিন্ন গ্রামের আপীল অফিসার এনায়েতুর রহমান, বিভিন্ন গ্রামের মাঠ পর্যায়ের সার্ভেয়ার ফুরকান ও পেশকার খালেকের বিরুদ্ধে ভূমি মালিকদের প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। ৩১ধারার হাজিরা দিতে জমির মালিকদের কাছ থেকে মামলা প্রতি ৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। দুর্লভপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুল কুদ্দুসের পুত্র নূর মোহাম্মদ জানান, তার পিতার পৈত্রিক সম্পত্তি ৩১ ধারার রেকর্ড দেওয়ার জন্য আপীল অফিসার এনায়েতুর রহমান ৩০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবী করেন। এক পর্যায়ে ২০ হাজার টাকা দিলে ভূমি রেকর্ড দেওয়া হবে বলে জানান। এর প্রতিবাদ করলে আপীল অফিসার তাকে বলেন, ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে এখানে এসেছি। বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকরা উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার বিধান চক্রবর্তীকে অবহিত করা হলে নূর মোহাম্মদের ভূমি রেকর্ডের কাজ বিনা উৎকোচে করে দেয়া হয় বলে জানা গেছে। ভূমি মালিক সালেহ আহমদ, আমিনুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ, হেলাল আহমদ, সিদ্দেক আলী, মুহিবুর রহমান নূরুল আলম, বদু মিয়া, সামছুল হক, আব্দুল হান্নান সহ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অসংখ্য জমির মালিকরা জানিয়েছেন, তাদের জমির কাগজপত্র সবকিছু ঠিক থাকার পরও টাকা দিতে হচ্ছে। আবার অনেকে মোটা অংকের টাকা দেওয়ার পরও ৩১ ধারার রেকর্ডে সমস্যা হবে বলে বিবেচনা করে মুখ খুলছেন না। স্বচ্ছভাবে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ভূমি জরিপের কাজ সম্পন্ন করতে এ ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করতে প্রশাসনিক নজরদারী বৃদ্ধির দাবী জানিয়েছেন ভূমি মালিকরা। এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা বিধান চক্রবর্তীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা স্বচ্ছভাবে ভূমি জরিপের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। কোন ভূমি মালিকের কাছ থেকে অন্যায় ভাবে কোন অফিসার টাকা গ্রহণ করলে তা খতিয়ে দেখা হবে। এ ক্ষেত্রে কেউ অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকলে জমির মালিকরা বিষয়টি তাকে অবহিত করলে তিনি উপযুক্ত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়