Monday, July 16

বদলে যাচ্ছে বিজিবির প্রশাসনিক ও অপারেশনাল কার্যক্রম

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) ব্যাপক সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে পুনর্গঠন করা হচ্ছে। এজন্য বিজিবিকে ভাগ করা হচ্ছে ৪টি অঞ্চলে। ইতিমধ্যে বিজিবি পুনর্গঠন প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মূলত বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী পুনর্গঠন প্রস্তাবটি অনুমোদনের পরই সে আলোকে কাজ শুরু করেছে বিজিবি সদর দফতর। পুনগর্ঠূনে পাল্টে যাচ্ছে বিজিবির প্রশাসনিক ও অপারেশনাল কাঠামো। পাশাপাশি বাড়ছে জওয়ানদের সুযোগ-সুবিধাও। এখন থেকে বিজিবি সব সদস্যই সীমান্ত ভাতা পাবে। একই সাথে জওয়ানদের পরিবারের মাসিক জ্বালানি খরচও বাড়ানো হয়েছে ৩ গুণ। বাড়ানো হয়েছে মসলা ভাতার পরিমাণও। ইতিমধ্যে পিলখানায় ৩৬ রাইফেল ব্যাটালিয়ন বিলুপ্ত করা হয়েছে। আর নতুনভাবে তৈরি করা হচ্ছে ১১টি ব্যাটালিয়ন।সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পুনর্গঠনের আলোকে বিজিবিকে ৪টি অঞ্চলে ভাগ করা হচ্ছে। এসব অঞ্চলের মধ্যে উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের সদর দফতর হবে নওগাঁয়, দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সদর দফতর থাকবে যশোর, উত্তর-পূর্ব সদর দফতর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে এবং দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের সদর দফতর থাকবে চট্টগ্রাম। একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা হবেন আঞ্চলিক সদর দফতরের প্রধান। তাছাড়া ১১টি নতুন ব্যাটালিয়ন নিয়ে সদর দফতর করা হবে। একই সাথে তৈরি করা হবে ৪টি সেক্টরও। আর বিওপি তৈরি করা হবে আরো ১শ�। বর্তমানে বিজিবিতে ৪৭টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। কিন্তু বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ৪টি ব্যাটালিয়ন বিলুপ্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এসব ব্যাটালিয়নগুলো হচ্ছে ২৪, ৩৬, ১৩ ও ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়ন। মূলত ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় নৃশংস বিডিআর বিদ্রোহের কারণেই এ বাহিনীর পুনর্গঠনের দাবি ওঠে। এর ধারাবাহিকতায় এ বাহিনীর পুনর্গঠন নিয়ে একটি সমন্বিত প্রস্তাব দেয়া হয় সরকারকে। গত সপ্তাহে বিজিবি পুনর্গঠনের প্রস্তাব অর্থ অনুমোদন করে। এর পর থেকেই বিজিবির পুনগর্ঠন প্রস্তাবের আলোকে বেশ কিছু সংস্কারমূলক কাজে হাত দেয় কর্তৃপক্ষ। কারণ আধুনিক ও যুগোপযোগী একটি বাহিনী হিসেবে বিজিবিকে গড়ে তুলতে হলে পুনর্গঠনের বিকল্প ছিল না।সূত্র জানায়, বিজিবির পুনর্গঠনে জওয়ানদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলোতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে জওয়ানদের রেশন ও অন্যান্য ভাতাও। বিদ্রোহের পর বিজিবি সদস্যরা এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ বাহিনীর সদস্যরা আর পেছন ফিরে না তাকিয়ে সামনে দিকে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে। সীমান্ত ভাতা অনুমোদিত হওয়ায় এখন থেকে সকল বিজিবি সদস্যই মাসিক ৩৩৮ টাকা ভাতা পাবেন। তাছাড়া আগে প্রত্যেক বিজিবি সদস্যকে মাসে মসলা খরচ বাবদ ১৯ টাকা বরাদ্দ দেয়া হবো। কিন্তু এখন থেকে মসলা না দিয়ে প্রতি মাসে ২১ গ্রাম মসলা দেয়া হবে। একই সাথে বিজিবি পরিবারের সদস্যদের জ্বালানি ভাতা ৫২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬৮ টাকা করা হয়েছে। আগে প্রত্যেক জওয়ানকে মাসে ৪০ কেজি কাঠ দেয়া হতো। আর যেখানে কাঠ সরবরাহ সম্ভব হতো না সেখানে ৫২ টাকা জ্বালানি খরচ দেয়া হতো। ইতিমধ্যে জওয়ানদের রেশন সুবিধা বাড়ানো হয়েছে শতভাগ। বাড়ানো হয়েছে যানবাহন ও চিকিৎসা সুবিধাও। এজন্য বিজিবি সদস্যদের জন্য আরো ৩টি হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া বিজিবি সদস্যদের জাতিসংঘ মিশনে পাঠানোর বিষয়টিও সক্রিয়ভাবে সরকার বিবেচনা করছে।সূত্র আরো জানায়, পুনর্গঠনের আলোকে বিজিবি সদস্যদের যে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে তাই নয়, একই সাথে জওয়ানদের মানবাধিকার বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বিজিবির ৪টি সেক্টরের সব জওয়ানকে মানবাধিকার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রস। তাছাড়া প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনপাতেও আমূল পরিবর্তনের অংশ হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে নতুন পাঠ্যসূচি। বিশেষ করে সীমান্ত সুরক্ষা, জওয়ানদের শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতার বিষয়াদি নিয়ে পৃথক ট্রেনিং অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া যুক্ত করা হচ্ছে নারী ও শিশু পাচার রোধে করণীয় সংক্রান্ত অধ্যায়ও। একইভাবে বিজিবি জওয়ানরা কীভাবে সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় পারদর্শিতা অর্জন করতে পারবে সে বিষয়েও শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। থাকছে মাদকের কুফল ও এর বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পাঠ্যসূচিও। তাছাড়া সীমান্তে অপারেশনাল কর্মকাণ্ড জোরদারের পাশাপাশি চোরাচালন, মাদক নিয়ন্ত্রণ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। একই সাথে সীমান্তে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনার জন্য সরকার বিজিবি সদস্যদের ১৪শ� মোটরসাইকেল সরবরাহ করছে। ইতিমধ্যে অনেক ব্যাটালিয়নকেই মোটরসাইকেল দেয়া হয়েছে। ফলে সীমান্ত অঞ্চলে গতি এসেছে মাদকবিরোধী অভিযানে।উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে পিলখানায় বিদ্রোহের পর নতুনভাবে সীমান্তরক্ষী বাহিনী যাত্রা শুরু করে। বিদ্রোহের পর এ বাহিনীর নাম বদল করে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি। ২০১০ সালের ১ মার্চ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের খসড়া আইন উপস্থাপন করা হয় মন্ত্রিসভায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১২ জুলাই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০ এর খসড়া মন্ত্রিসভা অনুমোদন দেয়। আর গত ২০ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয় বর্ডার গাড বাংলাদেশ বিল-২০১০ এবং ৮ ডিসেম্বর তা পাস হয়। খবর:-ফেয়ার নিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়