শুক্রবার বাংলাদেশের আকাশে মাহে রমযানের চাঁদ দেখা গেছে। আহলান সাহলান মাহে রমযান। বছর ঘুরে আবার এলো সিয়াম সাধনার মাস রমযান। আজ পহেলা রমযান। আজ সন্ধ্যায় ১৪৩৩ হিজরী সালের মাহে রমযানের চাঁদ দেখার পর জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি এ ঘোষণা দিয়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এ খবর ছড়িয়ে যায় টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের এই মাসকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পৃথক বিবৃতি দিয়েছে, র্যালি বের করেছে। মাসব্যাপী রোজা পালনসহ মহান আল্লাহ-তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ইবাদত-বন্দেগী করার জন্যে রাজধানী ঢাকাসহ প্রত্যন্ত জনপদের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ পূর্বাহ্নেই তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। এদিকে, আত্মসংযম, অনুকম্পা ও ক্ষমা লাভের মাস রমযান উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ মুসলিম বিশ্বের সকল ধর্মপ্রাণ মুসুল্লীকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়েছেন।মাহে রমযান মুসলিম উম্মাহর জন্য শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। প্রতি বছর এই মাস আমাদের মাঝে উপস্থিত হয় আত্মশুদ্ধি, আল্লাহর নৈকট্য লাভ, রহমত ও বরকত লাভের অপার সওগাত নিয়ে। আল-কুরআনে বলা হয়েছে, রোজা পালনে আল্লাহর প্রতি যে ভয় ও সম্মান প্রদর্শন করা হয়, সে জন্য বান্দাকে তিনি নিজ হাতে পুরস্কৃত করবেন। হাদিস শরীফে রয়েছে, রোজাদার ব্যক্তিদের বেহেশতে প্রবেশের জন্য �রাইয়ান' নামক বিশেষ দরজা সংরক্ষিত থাকবে।গতকাল মাগরিব নামাযের পর জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার খবর ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে প্রতীক্ষমান ধর্মপ্রাণ মুসলমান নারী, পুরুষ, এমনকি শিশুরা জানতে পেরে তারাবীহ নামাযের প্রস্তুতি নেন। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিটি মসজিদে একই নিয়মে খতমে তারাবীহ পড়ানোর জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন আগে-ভাগেই নির্দেশনা দিয়েছে। তবে লোডশেডিংয়ের কারণে মুসল্লীদের মসজিদে এশা ও তারাবীহ নামায আদায় করতে অনেক ক্ষেত্রে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। রমযানকে সামনে রেখে গতকাল অপরাহ্নে রাজধানীর প্রতিটি গণপরিবহণ ছিল যাত্রীপূর্ণ। অনেকেই গন্তব্যের গাড়ি পেতে হিমশিম খেয়েছেন। সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত অফিসের অধিকাংশেই দুপুর হওয়ার সাথে সাথে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি কমতে থাকে। ভিড় বাড়তে থাকে বিশেষ করে খেজুর ও ইফতার সামগ্রীর কাঁচামালের দোকানে। প্রয়োজন মেটাতে কেউ কেউ নতুন টুপী, তসবীহ ও পবিত্র কুরআন মাজীদ কিনে নিয়েছেন। মাহে রমযান উপলক্ষে বিটিভিসহ ইলেকট্রনিক চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার গতকাল সন্ধ্যা থেকেই শুরু করেছে।আজ মাহে রমযানের সূচনা দিবসে স্বাভাবিক কারণেই অফিস-আদালত, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজারের দৃশ্যপট বদলে যাবে। মসজিদে মুসুল্লীর সংখ্যা বেড়ে যাবে। ইফতার সামগ্রী তৈরি বিপণনের জন্য বসবে মওসুমী দোকানপাট। রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে গুলশান বনানী সর্বত্র পরিণত হবে ইফতার বাজারে। অনেকেই ঘরে তৈরি করবে বিশেষ খাবার। এদিকে মাহে রমজানের আগমনকে স্বাগত জানিয়ে জাতীয় নেতৃবৃন্দ বলেছেন যে, আত্মশুদ্ধি, সাম্য, সহমর্মিতা ও মানবীয় গুণাবলীর সৃষ্টির উদাত্ত আহবান নিয়েই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র রমযান আমাদের দ্বারপ্রান্তে সমাগত। তারা মাহে রমযানের প্রাক্কালে দেয়া বিবৃতিতে বলেন যে, মুসলিম জাতীয় ঐতিহ্য চেতনায় এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জীবনে রমযান অতি গুরুত্বপূর্ণ। রমযান মাস পবিত্র কুরআন নাজিলের মাস, ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাস, বিজয়ের মাস। মুসলমানের দ্বীন ও দুনিয়ার সমৃদ্ধি, পার্থিব ও আধ্যাত্মিক উন্নতি, দৈহিক ও মানবিক শ্রেষ্ঠত্ব আর গৌরব ও মর্যাদার অবিস্মরণীয় স্মৃতি বয়ে নিয়ে আসে মাহে রমযান। উন্নত চরিত্র অর্জনের পক্ষে অন্তরায় পাশবিক বাসনার প্রাবল্যকে পরাভূত করে পাশবিক শক্তিকে আয়ত্তাধীন করা হচ্ছে সিয়ামের তাৎপর্য। ব্যক্তিগত এবং সামাজিকভাবে সর্বত্র আল্লাহর দীনের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠায় যাবতীয় প্রতিকূলতার মুখে টিকে থাকার জন্য যে মন-মানসিকতার প্রয়োজন, সিয়াম সাধনার দ্বারাই তা অর্জিত হয়। মানবতার মহান নেতা রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তার বিপ্লবী সাহাবারা এ মহান মাসে লড়াই করেছিলেন বাতিলের বিরুদ্ধে, অন্যায়, অসত্য, জুলুম ও শোষণের বিরুদ্ধে এবং মানুষের ওপর মানুষের প্রভুত্ব খতম করার মহান লক্ষ্যে। সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে মানব জাতিকে মহান আল্লাহ তায়ালার রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের আহবান জানায় এ মাস। এ মাসের যথাযথ মর্যাদা রক্ষার জন্য সর্বস্তরের মুসলমানকে এগিয়ে আসতে হবে। রমযানের পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সরকারকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য নাগালের ভিতর রাখতে হবে। গরীব, অসহায় ও মেহনতি মানুষ যেন অর্ধাহারে ও অনাহারে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শ্রমিকদের শ্রম কমিয়ে দিয়ে পুরাপুরি মজুরি প্রদান করা সকলের কর্তব্য। পবিত্র রমজান উপলক্ষে সকলকে দ্বন্দ্ব-কলহ, হিংসা-বিদ্বেষ, পরনিন্দা ও চোগলখোরী ছেড়ে দিয়ে আত্মসংযম অর্জন করতে হবে। এ মাস বেশি বেশি নেক আমল, কুরআন-হাদিস, ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন এবং রমযানের পবিত্রতা রক্ষা করে যাবতীয় বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা থেকে সমাজকে রক্ষার জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালন করতে হবে বলে তারা উল্লেখ করেন। খবর:-ফেয়ার নিউজ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়