দীর্ঘদিন ধরে ৯জন এম.বি.বি.এস ডাক্তারের স্থলে মাত্র এক জন, এডহক ভিত্তিতে আরো দু’জন ডাক্তার কর্মরত থাকায় কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ভেঙে পড়েছে। এদের মধ্যে একজন সদ্য যোগদান করেছেন। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে ডাক্তার সংকটের কারনে কাংকিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। জীবন রাকারী ঔষধ-পত্র কিনতে হয় বাহির থেকে। ডায়রীয়া আক্রান্ত রোগীদেরও বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে কলেরা স্যালাইন, সিরিঞ্জ ও অন্যান্য ঔষধ-পত্র বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। গত সোমবার কানাইঘাট পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিব আহমদ মুমূর্ষ অবস্থায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে তার ভাই খলিলুর রহমান তাঁকে সকাল ১১টায় হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে ডাক্তার না পেয়ে তাঁকে পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এসময় কর্তব্যরত নার্স আমিনা বেগম কাউন্সিলারের ভাই খলিলুর রহমানকে একটি স্লিপ লিখে দিয়ে দুটি ডায়রিয়া স্যালাইন, সিরিঞ্জ ও আরো কিছু ঔষধ ফার্মেসী থেকে কিনে আনতে বলেন। এসময় খলিলুর রহমান নার্স আমিনা বেগমকে বলেন, ডায়রিয়ার স্যালাইন হাসপাতালে থাকার কথা, কিনতে হবে কেন? জবাবে নার্স আমিনা বেগম বলেন, হাসপাতালে কোন স্যালাইন নেই। পরে খলিলুর রহমান ফার্মেসী থেকে ঔষধ কিনে আনেন। একই অভিযোগ করেছেন ডালাইচর গ্রামের রওশনা বেগম। তিনি বলেন, সোমবার ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হলে বাহির থেকে স্যালাইনসহ ঔষধ সামগ্রী কিনতে হয় তার আত্মীয় স্বজনকে। অপরদিকে একই দিনে ডালাইচর গ্রামের রেহিমা বেগম (১৮) জরুরী বিভাগে তার আঙ্গুলের কাঁটা তোলার জন্য গেলে কর্তব্যরত নুরুল ইসলাম তার চিকিৎসার জন্য দুইশত টাকা চান। এক পর্যায়ে বিনা পয়সায় চিকিৎসা না পেয়ে তার ভাই ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিনকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি তার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে পূণরায় রেহিমা বেগমকে হাসপাতালে নিয়ে যান এবং চিকিৎসার জন্য কেন টাকা চাওয়া হল জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম বলেন, প্রাইভেট চিকিৎসার জন্য ২০০টাকা চাওয়া হয়েছে। এক পর্যায়ে হাসপাতালে একমাত্র চিকিৎসার জন্য নিয়োজিত ডাঃ আবুল হারিছকে অবহিত করা হলে তিনি নিজে রেহিমার কাঁটা তুলে দেন। গত রবিবার রাত ৪টায় মূমর্ষ অবস্থায় ডায়রিয়া আক্রান্ত গোরকপুর গ্রামের সাহাব উদ্দিন তার ১বছরের শিশু আয়শা বেগমকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে তাকে বাহির থেকে স্যালাইন ও অন্যান্য ঔষুধ পত্র কেনার জন্য স্লিপ দেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে কোন ধরনের ঔষধ না পেয়ে পরদিন সকালে ফার্মেসী খোলার পর স্যালাইন ও অন্যান্য ঔষধ কিনে আনলে তার শিশু মেয়েকে চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। এছাড়া পৌরসভার বাইয়মপুর গ্রামের নাসিমা বেগম (১৮)কে তার স্বামী অমানষিকভাবে লোহার রড দিয়ে পিঠিয়ে ঘাড় ও পিঠে মারাত্মক জখম করলে তাকে হাসপাতালে একদিন রেখে রিলিজের চেষ্টা করা হয়। খবর পেয়ে অসুস্থ কাউন্সিলর হাবিব আহমদকে দেখতে পৌর মেয়র লুৎফুর রহমান হাসপাতালে আসেন। এসময় কাউন্সিলরের স্বজন ও হাসপাতালে ভর্তি রোগীরাসহ এলাকার আরো অনেকে হাসপাতালে সার্বিক চিকিৎসা কার্যক্রমের বেহাল দশা উল্লেখ করে বলেন, এখানে এসে কোন চিকিৎসা ঔষধ পত্র ও ডাক্তার পাওয়া যায় না। হাসপাতালে ভর্তির পর বেশিরভাগ রোগীকে সিলেট প্রেরণ করা হয়। ডায়রিয়া, পেট ব্যাথা, সর্দি ও জ্বরের মতো রোগের ঔষধ বাহির থেকে কিনতে হয়। অভিযোগকারীরা দীর্ঘ ২৫বছর ধরে হাসপাতালে কর্মরত নার্স আমিনা বেগম ও তার স্বামী এম.এল.এস.এস সাজুকে অন্যত্র বদলির দাবী জানানোর পাশাপাশি রোগীদের সাথে অসদাচরণ ও দায়িত্ব পালনে অবহেলা কারীদের প্রত্যাহার করতে বলেন। পরে মেয়র লুৎফুর রহমান হাসপাতালে দায়িত্ব প্রাপ্ত ডাঃ আবুল হারিছসহ অন্যান্যণ স্টাফদের নিয়ে বৈঠকে বসে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করাসহ সাধারণ জনিত রোগের ঔষধ হাসপাতাল থেকে পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করার কথা বলেন তিনি। এেেত্র তার প থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন হাসপাতাল কর্তৃপকে। এ ব্যাপারে হাসপাতালের দায়িত্ব প্রাপ্ত ডাঃ আবুল হারিসের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, গত সোমবার তিনি একটি প্রোগ্রামে নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ছিলেন। তিনি হাসপাতালে থাকলে চিকিৎসা সংক্রান্ত কোন ধরনের অবহেলার ঘটনা ঘটত না। ভারপ্রাপ্ত ইউ.এইচ.ও ডাঃ শামসুল ইসলাম ঢাকায় ট্রেনিং সংক্রান্ত কাজে থাকায় তাকে হাসপাতালের চিকিৎসাসহ যাবতীয় প্রশাসনিক কাজ করতে হয়। তারপরও রোগীদের চিকিৎসা সেবায় সবাই আন্তরিক রয়েছেন বলে জানান। ডায়রিয়ার কলেরা স্যালাইন হাসপাতালে থাকার পরও রোগীদেরকে বিনা মূল্যে সরবরাহ না করার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়